‘ডিজনিল্যান্ড’ আসলে এক রূপকথার দেশ। এই ইট-কাঠ-পাথরের শহরে যদি নেমে আসে এমন এক দেশ, যে দেশে কোনো দুঃসংবাদ নেই, যে দেশে নেই খারাপ মানুষের জায়গা। যে দেশ আসলে এক ভালবাসার দেশ! গতকাল, ৮ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যেবেলা, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির ত্রয়োবিংশ নাট্যমেলায়, সত্যিই শহরে এক রূপকথার দেশ নামিয়ে এনেছিলেন ‘কলকাতা রমরমা’ নাট্যগোষ্ঠীর কলাকুশলীরা।
খুব সহজ করে বলতে গেলে, ‘ডিজনিল্যান্ড’ আসলে এক বৃদ্ধাশ্রমের নাম। যদিও, ‘ডিজনিল্যান্ড’ অন্যসব আশ্রমের থেকে আগাগোড়াই আলাদা। কর্ণধার বৃন্দার মস্তিষ্কপ্রসূত অভিনব পদ্ধতিতে হয় এই ‘ডিজনিল্যান্ড’-এর দিনযাপন। বয়স্ক মানুষদের দেখভাল করার জন্য আছেন কিংশুক, শাওনসহ একাধিক তরুণ-তরুণী। অবশ্য ‘ডিজনিল্যান্ড’-এর সকাল থেকে রাত অবধি খেয়াল রাখে রাজু। সদস্যদের মধ্যে সে কনিষ্ঠতম। সকলের মতে সে ‘ডিজনিল্যান্ড’-এর প্রাণ। তবে এমন সহজ জীবনেও বাঁক আসে প্রকৃতির নিয়মে। সেই বাঁকের মুখে হয়ত ভেঙে পড়তে চায় কেউ, কিন্তু বাকিরা তাকে আটকে রাখে একশোহাতে।
ক্রিকেটের সঙ্গে যে এই নাটকের একটা সূক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে, তা বোঝা গিয়েছিল পোস্টার দেখেই। তুমুল হাসি আর মন ভিজে যাওয়া আবেগ নিয়ে মঞ্চস্থ হয়েছে কন্যকা ভট্টাচার্য নির্দেশিত ‘ডিজনিল্যান্ড’। রাজুর প্রত্যেক কথায়, শারীরিক ভঙ্গিমায় দর্শকেরা লুটিয়ে পড়েছে হাসতে হাসতে। আবার বৃন্দার স্মৃতিচারণ কি আনন্দদাদুর সমস্যার কথা বলার সময়ে আলতোহাতে কেউ মুছে নিয়েছেন চোখের কোল। হাসি-মজায় ভরপুর অথচ মনকেমনের মোড়কে তৈরী নাটকটি প্রাণ পেয়েছে কলাকুশলীদের অভিনয়ে। রাজন্যা চৌধুরী, তন্ময়, জিৎ, সৃজিত ঘোষ, মধুবন্তী, শুভব্রত, কন্যকাসহ চোখধাঁধানো অভিনয় করেছেন সকলেই। তবে আক্ষরিক অর্থেই এ নাটকের ‘ধুকুপুকু’ শিলাদিত্য চ্যাটার্জী।
আলাদা করে বলতে হয়, অম্বরীশ-কুন্তলের মঞ্চসজ্জা, সাধন পাড়ুই ও সমর পাড়ুইয়ের আলোকসজ্জা এবং গায়ক তিমির বিশ্বাসের আবহের কথা। প্রতিটি দৃশ্যে আলো বা আবহের ব্যবহার, গানের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে নাটকের আকর্ষণ। এক ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিটের দীর্ঘ এই নাটক দর্শকদের বসিয়ে রেখেছিল নিজের আসনে। হিংসা, রাগ আর স্বার্থপরতার যুগে ‘ডিজনিল্যান্ড’ মনে থেকে যায় রূপকথা হয়ে।