Live Entertainment & Love Lifestyle

Tuesday, April 8, 2025
Theatre

Henry Kothay Review: শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের গর্জন

গতকাল ‘অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’-এর মঞ্চে ছিল ‘ইচ্ছেমতো’ নাট্যদলের প্রযোজনা ক্লিফোর্ড ওডেটস্‌-এর ‘ওয়েটিং ফর লেফটি’ অবলম্বনে তৈরী নাটক ‘হেনরি কোথায়’-এর শো। দেখতে দেখতে মনে পড়ছিল অনুপম রায়ের সাম্প্রতিক এক গানের পংক্তি, ‘তোমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে/ আর সেফ খেলো না’। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সত্যিই কি আর সেফ খেলা সম্ভব!

যদিও, সৌরভ পালোধী নির্দেশিত এই নাটকের নাম ‘হেনরি কোথায়’, তবু হেনরির কথায় একটু পরেই আসছি নাহয়। আগে গল্পটা একটু বলি! যদিও এ নাটকের কতটা গল্প, আর কতটা যে কঠিন বাস্তব, সে বিচার করা বড়ই ঝক্কির কাজ। নাটকের চরিত্রেরা প্রায় সকলেই মুখ্য, কারণ এ নাটকে আসল চরিত্র জনতা, আরো ভাল করে বলতে গেলে শোষিতশ্রেণী। ড্যানিয়েল, অলিভিয়া, জেমস, বেনিসিয়া, মারিয়ারা দু’বেলা দু’মুঠো খেতে চায়। ভিক্ষান্ন নয়, গতরে খেটে কাজ করে, উপার্জন করেই খেতে চায় তারা।

চায় বটে, কিন্তু পায় কি! মালিকশ্রেণীর মানুষদের চাহিদা মেটাতে মেটাতে কখন যে তারা ‘কম’টুকুকেই প্রাপ্য বলে মনে করে, সেটা হয়ত তারা নিজেরাই বুঝতে পারে না। দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে থাকতে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বোঝা যায়, ‘স্ট্রাইক’টা এবার শুরু করা উচিত। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতা হাতে থাকলে যারা মানুষকে মানুষ বলে জ্ঞান করে না, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনটা এবার শুরু করা উচিত। সে আন্দোলনে ঝুঁকি কি একেবারেই নেই? অবশ্যই আছে! তবু মনে হয়, মারিয়া ঠিকই বলেছে, শূন্য থেকে শূন্য গেলেই বা ক্ষতি কী!

কলকারখানা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই বঞ্চিতকে বঞ্চিততর করে তোলার রেওয়াজকেই যেন ধাক্কা দিয়েছে এই নাটক। শঙ্কর দেবনাথ, ঋত্বিকা নাথ, কৃষ্ণেন্দু সাহা, বুদ্ধদেব দাস, সুচরিতা মান্নাসহ প্রত্যেকের অভিনয় ধাক্কা দিয়েছে অন্তরে। ছোট্ট মেয়ে ইভার চরিত্রে বিস্মিত করেছে দরিয়া দাশ পালোধীর অভিনয়।

সৌরভ পালোধী, আমাইরা মুসকানের পোশাক পরিকল্পনা, সৌমেন চক্রবর্তীর আলোকসজ্জা বা সৌরভ পালোধী ও অপ্রতিম সরকারের মঞ্চসজ্জা অবশ্যই অত্যন্ত মানানসই। তবে আলাদা করে বলতেই হয় দেবদীপ মুখার্জীর বাঁধা গানের কথা। নাটকের সঙ্গে ঠিক কতটা মিশে গিয়ে একটা ‘নাটকের গান’ বাঁধা যেতে পারে, এ বোধহয় তারই প্রমাণ।

দিনের পর দিন রাস্তায় বসে থাকা চাকরীপ্রার্থীদের কথা মাথায় রেখেই তৈরী এই নাটক। ঘরে বসে সমবেদনা জানানোর বদলে কি আন্দোলনে সত্যিই তাদের পাশে দাঁড়াব আমরা? নাকি নিজেদের পিঠে দেওয়ালের স্পর্শ পাওয়ার অপেক্ষা করব! সে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। তবে জানা আছে, জ্যাকের একটা সহজ সংলাপ, ‘যারা যুদ্ধে যায়, তারা যুদ্ধ চায় না। আর যারা যুদ্ধ চায়, তারা যুদ্ধে যায় না।’

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

    View all posts

Debasmita Biswas

বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।