‘বুঝলাম, আমাদের ভয়েসটাকে কেউ থামিয়ে দিতে চাইছে’ : উন্মেষ

অনেকসময়ে মানুষ টিভির রিয়েলিটি শো-এর সঞ্চালকদের শোয়ের নামে চিনত। এই যেমন ধরুন, ‘রোজগেরে গিন্নি’র মত কিছু! কিন্তু এমন একজনের কথা ভাবুন তো, যাঁকে একটা সিরিজের বিভিন্ন চরিত্রের নাম ধরে অনায়াসে ডাকতে পারেন আপনারা!

‘BMS’-এর ঘোতনকে চেনেন না, আজকের দিনে এমন মানুষ পাওয়া দায়। কখনো ঘোতন, কখনো টুকাই, আবার কখনো যদুবাবু, আবার কখনো আরো অসংখ্য অবতারে দেখা মেলে তাঁর। এমন একজন মানুষ, যিনি ‘তথাকথিত অভিনেতা’ নন, অথচ সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলেন প্রতিটি চরিত্রকে, তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে কার না ইচ্ছে হয়! আর কে না জানে, ইচ্ছে হলে ইচ্ছেপূরণ করে নেওয়াই দস্তুর। সেইমতই, ‘ফ্যামিলি স্কেচ’, ‘যদুবাবুর টিউশনি’-খ্যাত ‘BMS’-এর উন্মেষ গাঙ্গুলীর সঙ্গে আলাপ হল, গল্প হল, গল্পের মাঝে উঠে এল তাঁর জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনার কথা।

ছোটবেলায় ‘জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় আমরা যা যা লিখি, সেগুলো মেলে না বেশীরভাগ সময়েই। কারণ কে যে কখন কোনক্ষেত্রে সাফল্য পাবে, তা আমরা কেউই জানি না। একইভাবে, ২০১৮ সালে অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টরের চাকরী ছেড়ে মুম্বই থেকে বাঁকুড়ায় চলে আসার সময়ে তা জানতেন না উন্মেষও। আবার, ডাক্তার হলেই তিনি ভীষণ গম্ভীর, এমন ধারণা আমাদের অনেকেরই। কিন্তু কথায় কথায় জানতে পারলাম, ড. উদ্দীপ্ত গাঙ্গুলী, যিনি সম্পর্কে উন্মেষের দাদা, তিনিই কিন্তু লিখেছিলেন ‘BMS’-এর ইউটিউব চ্যানেলের প্রথম সিরিজের স্ক্রিপ্ট। দাদার সঙ্গেই, বাঁকুড়া ছেড়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন কলকাতায়। আরো কয়েকজনের সঙ্গে পাশে পেয়েছিলেন বন্ধু সাহেব আর দিদি উত্তীর্ণা গাঙ্গুলীকেও।

প্রায় পাঁচ-ছ’বছরের চ্যানেলে ওঠা-পড়া আছে প্রচুর। বাঙালির চিরকালীন অভ্যাসে জিজ্ঞেসও করলাম সেসব। জানলাম, কেবল চ্যানেলে নয়, ওঠা-পড়ার শুরু তারও আগে। চ্যানেল শুরুর আগে, ২০১৬ সালে তিনি খুলেছিলেন ‘BMS’-এর ফেসবুক পেজ। নানারকম মিমের সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক মিমও পোস্ট করা হত সেই পেজে। কিন্তু, হঠাৎ একদিন বন্ধ হয়ে গেল দেড় লক্ষাধিক ফলোয়ারসহ সেই পেজ। খোলা হল, ‘BMS 2.0’। কিন্তু দিনকয়েক পরেই, ফের একই ঘটনা! উন্মেষের কথায়, ‘তখন আমরা বুঝলাম, যে এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমাদের ভয়েসটাকে কেউ থামিয়ে দিতে চাইছে। কারণ আমরা সবরকম পার্টির বিরুদ্ধেই কথা বলেছি।’

তবু দর্শকদের জন্য এখনো টিকে রয়েছে ফেসবুক পেজ ‘BMS 3.0’। সমস্যায় পড়েছিলেন ইউটিউব চ্যানেল নিয়েও। উদ্দীপ্ত এবং সাহেব নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন আগেই। ঠিক দু’বছর আগে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভাঙন ধরেছিল তাঁর টিমে। স্বাভাবিকভাবেই, সেই ভাঙন ছড়িয়ে পড়েছিল মন পর্যন্ত। কিন্তু, সব অন্ধকারের মাঝে একবিন্দু আলোর রেখার মত, ’২২ সালের শেষেই ফের তিনি পাশে পেলেন বন্ধু সাহেব লক্ষ্মণকে। আবারও একসঙ্গে কাজ শুরু করলেন তাঁরা। তিনবছর পর, উন্মেষ আবার এলেন কলকাতায়।

সেই থেকে এখনো তাঁরা কাজ করছেন একসঙ্গে। কেবল ‘BMS’-এর ভিডিও বানানোই নয়, পাশাপাশি সিরিজ বানানোর সঙ্গে সঙ্গে, মিউজিক ভিডিও, সিরিজ, বিজ্ঞাপন প্রভৃতিতে বেশ কিছু অভিনয়ের কাজও করছেন উন্মেষ। ‘উলট পুরাণ’ সিরিজ, ‘নাগরিক’, ‘নেহেরু স্পিচ’ শর্টফিল্মের পাশাপাশি ‘কত কথা বলা হল না প্রিয়’, ‘মালতী মাসি’, ‘তোমার আমার রূপকথা’র মত মিউজিক ভিডিওতেও কাজ করেছেন তিনি। সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপনে সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। পাশাপাশি করেছেন বাচিকের কাজও। ‘নটে গাছতলার গল্প’ হোক, বা বহুল-জনপ্রিয় ‘গপ্পো মীরের ঠেক’, তাঁর কাজের ঝুলিতে রয়েছে সবই।

সব আনন্দের মধ্যেও তাঁর গলায় যেন হালকা বিষাদের সুর, ‘টিম ভাঙলে তো একটা প্রভাব পড়েই! আমি কোনোদিনই ‘BMS’ মানে একটা মুখ চাইনি, ছিলও না তা। আমি অনেকগুলো মুখ চেয়েছিলাম, কিন্তু ওরা হয়ত কখনো ভাবেনি ওভাবে! ভাবনার একটা ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্স ছিল, সেজন্যই নানাকারণে টিমটা ভেঙে যায়।’

তবে তাঁর মনকেমনের আঁচ যে দর্শকের মনে তিনি পড়তে দেবেন না, তা বুঝলাম তাঁর কথা থেকেই। মানুষকে অনাবিল আনন্দ দেওয়াকেই নিজের কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন উন্মেষ। আনন্দে ভরে উঠুক তাঁর নিজের জীবনও, আরো আনন্দ তিনি ছড়িয়ে দিন এই হিংসা-জড়ানো পৃথিবীতে!

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

    View all posts
Scroll to Top