একসময়ে বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের ‘লাঠি, ‘শ্বেতপাথরের থালা’, ‘প্রতিকার’, ‘পাপী’, ‘প্রতীক’-এর মত ছবি উপহার দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি ফের সেই ‘সান্তাক্লজ’কে দেখা গেল উপহারের ডালি হাতে নিয়ে। মেয়ে একতার হাত ধরে, আবারও এক স্বপ্নপূরণ করলেন পরিচালক প্রভাত রায়।
আগেই জানা গিয়েছিল, অতি শীঘ্রই আসতে চলেছে তাঁর আত্মজীবনী ‘ক্ল্যাপস্টিক’। বই লেখা তো হয়েছে। এবার পালা প্রচ্ছদপ্রকাশের। ‘বাবি’র বইয়ের প্রচ্ছদ যে মেয়ে একতাই আঁকবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী! 71/1 MB-র তরফ থেকে ‘মেয়ে’ একতা ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সবসময়েই মনে হয় বাবির জীবন খুব ইন্সপায়ারিং। ওঁর জীবনটাই সিনেমার মত। আমার খুব ইচ্ছে ছিল, ওঁর জীবনের স্ট্রাগল, সাকসেস, মাম্মার (প্রভাত রায়ের স্ত্রী) সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক, সবটা সবাই জানুক।’ তবে একতা এও জানান, আত্মজীবনী লিখতে প্রথমে রাজি ছিলেন না পরিচালক। কিন্তু রাজি হওয়ার পরেও, সহলেখক খুঁজে পেতে কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি তাঁদের।
তবে শেষপর্যন্ত মেয়েকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন সহলেখক হিসেবে। 71/1 MB-কে একতা এর আগে জানিয়েছিলেন, ‘দু’জনে মিলেই চলছে লেখালেখির কাজ। বাবির ইচ্ছে ছিল যদি বই বেরোয়, তাহলে সেটা যেন আমি লিখি।’ আসলে পরিচালকের জীবনের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর ঘটনাগুলোও তো জানেন কেবল মেয়েই। আত্মজীবনীর সেই শব্দজালের বুননে ঘাটতি ছিল কেবল সেই আবেগটুকুরই। তবে এরপরেও সমস্যায় পড়েছিলেন তাঁরা।
পরিচালকের ৮০-তম জন্মদিনে আত্মপ্রকাশ করার কথা ছিল বইটির। তবে তাঁর অসুস্থতার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে বাবির বইয়ের প্রচ্ছদ উপহার দেওয়ার জন্য, পিতৃদিবসের থেকে আর শুভদিন কী-ই বা হতে পারে। তাই, সেই দিনই প্রকাশিত হয়েছে ‘ক্ল্যাপস্টিক’-এর প্রচ্ছদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হরনাথ চক্রবর্তী, সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ গুহ, জয়দীপ মুখার্জী, প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী প্রমুখ।
কেবল তাই-ই নয়, সঙ্গে তাঁরা উদ্বোধন করেছেন প্রযোজনা সংস্থা প্রভাত প্রোডাকশনসেরও। একতা জানান, আটের দশকের শেষের দিকে অনেক অভিনেতাই ওঁকে প্রযোজনা সংস্থা খোলার পরামর্শ দিতেন। কিন্তু লোকবলের অভাবে ইচ্ছে থাকলেও, তা পূরণ হয়নি কখনো। একতা যোগ করেন, ‘আমি চাইছিলাম ওঁর নামটা লিগ্যাসি হিসেবে থেকে যাক সারাজীবন! তবে এটার কথা উনি জানতেন না। ইট ওয়াজ আ সারপ্রাইজ গিফট ফর হিম।’
বাবি-একতার কাল্পনিক এক দৃশ্যকল্প নিয়েই প্রযোজনা সংস্থার মোশন লোগো এঁকেছেন একতা। মিষ্টি সেই মোশন লোগোতে এক বাচ্চা মেয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে কাগজের উড়োজাহাজ। আর বাস্তবের মাটিতে তখন মেয়ের হাত ধরে স্বপ্ন-উড়ানে পাড়ি দিচ্ছেন পরিচালক।
বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।