ঋষভ-অভিজিতের ছবি নিবেদন করবেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী!
‘অন্তহীন’ থেকে ‘পিঙ্ক’, ‘অনুরণন’ থেকে ‘লস্ট’, বরাবরই বলি ও টলিপাড়ায় স্বচ্ছন্দ বিচরণ পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর। তবে এবার পরিচালকের ভূমিকায় নয়, আহ্বায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন অনিরুদ্ধ। পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরীর আগামী ছবি ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’ নিবেদন করবেন তিনি।
নতুন এ ছবি আদতেই একটা অন্যরকম ছবি। চারজন বাঙালি কিংবদন্তী শিল্পীকে (যামিনী রায়, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিকাশ ভট্টাচার্য, বিনোদবিহারী মুখার্জী) শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয়েছে এই ছবির মাধ্যমে। তৈরি হয়েছে মাল্টিভার্স। ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের ভিস্যুয়াল গ্রাফিক্সের। ছবির পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী জানান, ‘ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাশূন্যদের মাঝখানে পড়ে, আমাদের মধ্যবিত্ত জীবন প্রায়শই একটা প্রশ্নের সামনে এসে দাঁড়ায়। আদর্শ আঁকড়ে থাকব না ‘সারভাইভ’ করব! ধ্রুবর জীবনের চারটি সম্ভবনার কথা বলা হয়েছে চারটি অধ্যায়ে।’
পরিচালক জানান, এই চার শিল্পীর কাজের থিম অনুযায়ী চারটি জগৎকে তৈরি করা হয়েছে। আর্ট কলেজ থেকে ইউরোপিয়ান আর্টে প্রশিক্ষিত যামিনী রায়, সব ছেড়ে দেশীয় শিল্প রীতি পটচিত্র বেছে নেন। অন্যদিকে, দেশের অন্যতম অগ্রণী পলিটিক্যাল কার্টুনিস্ট গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষে প্রথম কিউবিজম নিয়ে কাজ করেন। বিকাশ ভট্টাচার্যের চিত্রকলায় ছিল অসাধারণ বহুমুখিতা। আবার বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় তার মুর্যাল আর্ট এবং স্ক্রল আর্টের জন্য প্রসিদ্ধ। দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও তিনি তার শিল্প সৃষ্টিতে অবিচল ছিলেন।
সম্পূর্ণ ভিন্নধারার এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋষভ বসু। তিনি জানান, ‘অভিজিৎদার সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় প্রজেক্ট। প্রথমটা ছিল ‘টুরু লাভ’, লকডাউনের সময়, হইচই-এর জন্য একটা সিরিজ। অভিজিৎদার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সবসময়ই খুব ভালো, কারণ ওর সঙ্গে আমার একটা অদ্ভুতরকমের বোঝাপড়া আছে। অভিজিৎদা যেটা বোঝাতে চায় সিনেমার মাধ্যমে, অভিনেতা হিসাবে আমি সবসময় চেষ্টা করি সেটাই ফলো করে চরিত্রের মনস্তত্ত্বটা তুলে ধরার, সেটা অভিজিৎদা খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়।’
এর পরেই তিনি আবার যোগ করেন, ‘এই চিত্রনাট্যের সবথেকে রোমাঞ্চকর বিষয় হচ্ছে বাংলার চারজন চিত্রশিল্পীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হল, এই ছবিতে এতগুলো দিক আছে। এই ছবিটার মধ্যে একটা লাভ স্টোরি আছে, থ্রিলার এলিমেন্ট আছে, সাইন্স ফিকশন মোমেন্টস আছে, তাই এটাকে একটামাত্র জঁর-এর ছবি বলা যায় না, অনেকগুলো জঁর-এর ছোঁয়াই আছে ছবির মধ্যে।’
অভিনেত্রী ঋত্বিকা পাল বলেন, ‘এটি অভিজিৎদার সঙ্গে আমার প্রথম ছবি ছিল। প্রথম থেকেই ওঁর যে দিকটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছিল, তা হলো ওঁর উদারতা। এই ছবিতে চিত্রকলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, এবং এটা কীভাবে ফুটে উঠবে, তা দেখার জন্য আমি ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। আমাদের টিম ছিল দুর্দান্ত, আর সবাই শুটিং সেটে খুবই মজার ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেছিল।’
অভিনেত্রী আনন্দরূপা চক্রবর্তীর ডেবিউ ছবি এটি। তিনি জানান, ‘জীবনে প্রথম বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ, সেটাও অভিজিৎ চৌধুরীর মতন দক্ষ একজন পরিচালকের হাত ধরে, অবশ্যই একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে থাকবে আমার জীবনে । অভিজিৎদা আমার চরিত্র নিয়ে নিজে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, সেটা আমাকে ‘ফিরোজা’ হয়ে উঠতে অনেকটা সাহায্য করেছে। মঞ্চে বহুদিন অভিনয় করলেও ক্যামেরা আমার কাছে নতুন মাধ্যম। কিন্তু সেক্ষেত্রেও অভিজিৎদার আমার প্রতি বিশ্বাস ছিল। চরিত্র থেকে শুরু করে দৃশ্যনির্মাণ প্রতিটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন ‘ভার্সেটাইল’ তরুণ অভিনেতা কোরক সামন্তও। এই ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এভাবে যে একটা ফিল্ম কন্সেপচুয়ালাইজ করা যেতে পারে, আমার ধারণা ছিল না। তাই প্রথমে যখন অভিজিৎদা একদিন হুট করে ডেকে ছবিটার গল্প আর আমার চরিত্রটার ব্রীফ দেয়, মগজ তালগোল পাকিয়ে গেছিল। বাড়ি ফিরে স্ক্রিপ্টটা পড়ে বুঝতে পারি, ও একটা সাংঘাতিক গপ্পো ফেঁদে বসেছে! এবং সেটা এক্সিকিউট করতে আমাদের মতো নতুন অভিনেতাদের ওপর ভরসা করছে।’
কেমন অভিজ্ঞতা শ্যুটিংয়ের? কোরক জানান, ‘ছোট্ট ইউনিট নিয়ে কাজ, সবাই মোটামুটি সবার বন্ধু। এদিকে ঝামেলা হচ্ছে, শেষমেশ ছবিটা দেখতে-শুনতে কেমন হবে, এক ডিরেক্টর ছাড়া কেউই বিশেষ আন্দাজ করতে পারছি না, কিন্তু ফ্লোরের সবাই দারুণ উত্তেজিত! কারণ মোটামুটি সবাইই যা করছি, তাতে অভ্যস্ত নই। নতুন কিছু হচ্ছে! ফলে শ্রমে বা মনোযোগে কোনো ঘাটতি হয়নি কারওরই।’
অভিনেতা যুধাজিত সরকার বলেন, ‘এই ছবিটি শুট করা আমার জন্য একটি দারুণ শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা ছিল। তার এক অন্যতম কারণ, আমি সৌভাগ্যবান যে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্ক্রিন-স্পেস ভাগ করে নিতে পেরেছি। তিনি এমন একজন ব্যক্তি, বহু বছর ধরে যার অভিনয়শৈলী অনুসরণ করে আসছি। আগে অভিজিৎদার সঙ্গে কাজ করেছি, এবং তাঁর ছবিতে একটি চরিত্র ফুটিয়ে তোলার সময় যে স্বস্তি পাই, তা সত্যিই একজন অভিনেতার জন্য আনন্দের বিষয়।’
প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই বারংবার বলেছেন তাঁদের মধ্যেকার দুর্দান্ত রসায়নের কথা। আটলান্টা, NABC এবং কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে একাধিক বিভাগে জিতেছে এই ছবি। পেয়েছে দর্শকদের প্রশংসাও। তাই ছবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস রয়েছে নির্মাতাদের মনে। একাধিক জঁরের এই ছবি যে আবারও দর্শকদের মন কাড়তে পারবে, সে-কথা হয়ত নিশ্চিতভাবে বলা যায় এখনই।