ঘাত-প্রতিঘাত সামলে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার যাত্রার ওপর এই ছবি। কিন্তু ছবির মধ্যে যে শুধু খেলাই আছে তা না। আছে প্রেম! প্রথম প্রেম! বাচ্চা বয়সের প্রেম। দাবাড়ুর প্রথম গান “ঝগড়া করি চল”-এ সেই ছোটবেলাকার প্রেমের গল্পগুলোকেই একের পর এক সুন্দর ভাবে সাজিয়ে উপস্থাপনা করেছেন প্রসেন, রাজা চৌধুরী ও টিম। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন মৈনাক মজুমদার ও সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ গানটি প্রকাশের সাথে সাথে দর্শক মহলে আলোচনা ছাড়িয়েছে। দুই কিশোর কিশোরীর এরকম নির্ভেজাল প্রেমের গল্পে গলছে বাঙালির মন, ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর সেই নির্ভেজাল প্রেমের কথাও মনে পড়ছে অনেকের। গানটি প্রকাশ পাওয়ার পর ছবিটিতে যে দাবা, পারিবারিক সংঘর্ষের পাশাপাশি প্রেমও একটা বড় ভূমিকা পালন করবে সেটা বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে।
প্রথম প্রেম প্রতিটা মানুষের মনেই একটা বিশেষ জায়গা দখল করে থাকে, ছোট ছোট অনুভূতিগুলোও বিশাল দাগ কেটে যায়। বোকা বোকা কথা বলা, নির্বুদ্ধিতার কাজ করা, আবেগে পূর্ণ হয়ে হাওয়ায় ভাসা, রাত জেগে ছবি আঁকা, চিঠি লেখা, তাকে একবার দেখার জন্য স্কুল ও টিউশনের ফাঁকে রাস্তায় অহেতুক দাঁড়িয়ে থাকা, মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করা, সবকিছুর মধ্যেই একটা অদ্ভুত মায়া, রহস্য জড়িয়ে থাকে।
“বারবার তাকে দেখার চল,
কি দিয়ে করব কথা শুরু বল?
তাহলে একটু ঝগড়া করি চল।”- প্রসেনের লেখা ও সুর সেই আবেগগুলোকে সঠিক জায়গায় আঘাত করতে পেরেছে।
বাংলাভাষায় তো বটেই, সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দাবা খেলা নিয়ে ছবি তৈরী হয়নি এর আগে। পথিকৃৎ বসুর হাত ধরেই চলচ্চিত্রজগতে পা রাখছে এই খেলা। তাও আবার কাল্পনিক কোনো গল্প নয়, বাঙালি দাবাড়ু সূর্যশেখর গাঙ্গুলীর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত এই ছবি।
গত ১২ই এপ্রিল মুক্তি পেয়েছিল ছবির টিজার। তাতে দেখা গিয়েছিল, দাবা খেলে যে ‘চাকরী’ জোটানো যায় না, বা ইচ্ছে থাকলেই যে ছেলেকে বড় দাবাড়ু তৈরী করা যায় না, এমন কথাও সূর্যর মা’কে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন শঙ্কর চক্রবর্তী, কৌশিক সেনের চরিত্রেরা।
তবে বর্ষীয়ান অভিনেতা দীপঙ্কর দে-র চরিত্রের বলা একটি কথা দাগ কাটে মনে, ‘বড় প্লেয়ারের আসল পরীক্ষা জিতে আসায় নয়, ফিরে আসায় হয়!’ সত্যিই কি কিছুটা অবহেলিত নয় এই ‘রাজার খেলা’? উত্তর কলকাতার রক থেকে ‘ভারতের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার’ হয়ে ওঠার যাত্রাটা ঠিক কেমন ছিল সূর্যশেখর গাঙ্গুলীর? সে গল্পই আসলে দাবাড়ুর অনুপ্রেরণা।
কেবল গল্প নয়, এই ছবির কাস্টিংয়েও রয়েছে চমক। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, দীপঙ্কর দে, খরাজ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, বিশ্বনাথ বসু, শঙ্কর চক্রবর্তী প্রমুখ তাবড় তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন এই ছবিতে। মুখ্য চরিত্র সূর্যর ভূমিকায় দেখা যাবে অর্ঘ্য বসুরায়কে। সমদর্শী সরকারকে দেখা যাবে ছোট সূর্যর ভূমিকায়।
গতবছর প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, শীতেই বড়পর্দায় আসতে চলেছে ‘দাবাড়ু’। তবে তা হয়ে ওঠেনি। তাই এইবছর গ্রীষ্মেই মুক্তি পেতে চলেছে নন্দিতা রায় এবং সঞ্জয় আগরওয়াল নিবেদিত এই ছবি। বনি চক্রবর্তী এবং প্রসেনের হাতে থাকছে এই ছবির মিউজিকের দায়িত্ব। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন অরিত্র ব্যানার্জী এবং সংলাপ লিখেছেন অর্পণ গুপ্ত। উইন্ডোজের হাত ধরে পথিকৃৎ বসুর এই নতুন ছবি আসছে আগামী ১০ই মে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। ইংরাজির পাশাপাশি ভালবাসা রয়েছে বাংলা সাহিত্যের প্রতিও। দেখার পাশাপাশি অভিনয়ও করেন নাটকে। বিনোদনজগতের বিভিন্ন আকর্ষক বিষয় নিয়ে খবর করেন তিনি।