Music

FOSSILS: ২৬ বছর পেরোল, ‘ফসিলস্‌’ কথা রেখেছে…

২৬ পেরিয়ে আজ ২৭-এ পা দিলেন তাঁরা। ‘নিন্দুকদের মনোবল ভাঙার আপ্রাণ চেষ্টা’র ‘জীবাশ্ম’-এর উপর স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘ফসিলস্‌’।

বছরের শুরুতে এই দিনটা আসলেই মনে মনে পিছিয়ে যেতে হয় অনেকগুলো বছর। ঠিক যে সময়টায়, বছরপঁচিশ বয়সের একটা ছেলে, বাংলায় বাঁধছে একের পর এক রকগান। অ্যালবাম অবশ্য তৈরী হয়নি প্রথমদিকে। কিন্তু ২০০২ সালে প্রথম অ্যালবাম তৈরীর পরও, সত্যিই কি সহজ ছিল সেই পাথুরে রাস্তায় পথচলা? উত্তরটা খুবই সহজ, হয়ত সকলের জানাও!

‘ফসিলস্‌’কে নিয়ে কথা উঠলেই, এক বিদেশী লেখিকার মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। বড় বড় লেখক-মানুষেরা বরাবরই ব্রাত্য করে রেখেছিলেন রাউলিংয়ের ‘হ্যারি পটার’কে। বলেছিলেন, ওসব নাকি ‘আজগুবি গল্পকথা’। ‘ফসিলস্‌’ সম্পর্কেও শোনা যেত ঠিক এরকম কথাই। ‘শোনা যেত’ বলাটা ঠিক হল না বোধহয়, পরিমাণ কমলেও এখনো সেসব শোনা যায় না কি? বেশ কিছু মানুষ তো এখনো বাংলা রককে ‘সোনার পাথরবাটি’ কথাটারই আরেক নাম মনে করেন। কেউ বলেন, এসব নাকি অপসংস্কৃতি। একটা সময়ে তো রেডিওতে ‘ফসিলস্’-এর গান বাজানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এতকিছুর পরেও, এখনো নিজের জায়গা কীভাবে ধরে রেখেছে ফসিলস্‌! এই তো সেদিন, মধ্যমগ্রামে অনিয়ন্ত্রিত ভীড়ের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছিল ‘ফসিলস্’-এর কনসার্ট। নিরাপত্তা, দুর্ঘটনার তোয়াক্কা না করে কেবল গান শোনার টানে কনসার্টে এভাবে ছুটে যায় মানুষ? তাও যে কনসার্ট প্রায় বছরপঁচিশ পুরোনো এক ব্যান্ডের?

আসলে একটা প্রজন্মের ব্যাপার তো নয়। সেসময় বাংলা ব্যান্ডের সংখ্যা কিন্তু মোটেই কম ছিল না! নরমসরম গান শুনতে অভ্যস্ত অল্পবয়সের কিছু তরুণ-তরুণী আচমকা শুনেছিল ‘ফসিলস’-এর ডাক, শুনেছিল ‘আরো একবার’, শুনেছিল ‘একলা ঘর’, শুনেছিল ‘বিষাক্ত মানুষ’। সব গোঁড়ামি দূরে সরিয়ে সেই ডাক আপন করে নিয়েছিল তারা। সেই উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের বয়সের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরো পঁচিশ, এখনো তারা নির্জন ‘মাঝরাতে, একঘেয়ে এই বিছানাতে’ও পায় ‘হাসনুহানা’র গন্ধ। তাদের পরবর্তী প্রজন্মও বড় হয়েছে ‘ফসিলস্’ শুনে, তাদের পরের প্রজন্মের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার!

মনে পড়ে, বছরদুয়েক আগে ‘ক্যাকটাস’-এর এক ফেসবুক লাইভে, ভক্তের আবদারে সিধু অনায়াসে গেয়ে উঠেছিলেন ‘ফসিলস্‌’-এর গান, ‘কেন করলে এরকম’। গতবছর কবীর সুমন বলেছিলেন, তিনি রূপমের ভক্ত। অরিজিৎ সিং বলেছেন, পাঁচিল টপকে ‘ফসিলস্‌’-এর গান শুনেছেন তিনি। গতবছরই এক অনুষ্ঠানে ‘ফসিলস্‌’-এর গানও গেয়েছিলেন তিনি।

তবু কেন অনেক বিদ্দ্বজ্জনেরা মানতে পারে না ‘ফসিলস্‌’-এর সাফল্য? ‘আমরা জানতাম আমাদের গান কেউ শুনবে না। কিন্তু যদি কেউ না-ও শোনে, তাও আমরা মিউজিকটা করব।’, কোনো প্রতিকূলতার পরোয়া না করে, এই মাথা উঁচু করে বাঁচার মনোভাবটাই হয়ত পছন্দ নয় তাদের। কিন্তু তাঁরা স্বীকার করুন বা না করুন, বাংলাতেও যে সত্যিই রকগান বানানো যায়, ‘রক’গান যে একেবারেই পাথুরে-আবেগবিহীন নয়, তা বাঙালীকে প্রথম বুঝিয়েছিল ‘ফসিলস্‌’ই। ‘ফসিলস্‌’-এর জন্মদিনে শুভেচ্ছা রইল একরাশ। বিলুপ্ত না হয়েও যে জীবাশ্মের মতই নিজের গানে ছাপ রাখা যায় সময়ের, সমাজের, তা বোঝানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ টিম ‘ফসিলস্‌’কে। ভক্তরা জানেন, যতবার কেউ ভেঙে পড়বে চারপাশের চোখরাঙানিতে, ততবার গিটারহাতে একজন বলে উঠবেন,তুমি কি নিজেকে ব্যর্থ ভাবো,/ তোমাকে আমি এ গান শোনাবো…/ আলোকের গতি আমার গানে,/
ছুটবে নতুন সূর্যটানে’…

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

    View all posts

Debasmita Biswas

বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।