রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুল ইসলাম – এই দু’জনের প্রভাব সারাক্ষণই ছড়িয়ে রয়েছে বাঙালির চিন্তায়, মননে। এবার দুই বাংলার যৌথ প্রচেষ্টায়, তাঁদের সৃষ্টিকে একসুতোয় বাঁধলেন দুই গুণী শিল্পী। এপার বাংলার জনপ্রিয় গায়িকা ইমন চক্রবর্তী এবং ওপার বাংলার ফারজানা সিফাত তৈরী করলেন এক অনন্য মেলবন্ধন।
বহুদিন পরে এরকম এক আন্তর্জাতিক যৌথ মেলবন্ধনের প্রয়াস দেখতে পেলেন দর্শকেরা। এপার বাংলার সকল সঙ্গীতপ্রেমীই চেনেন ইমন চক্রবর্তীকে। আধুনিক গান হোক, কিংবা লোকগীতি কি রবীন্দ্রসঙ্গীত, বিভিন্ন ঘরাণার গানে তাঁর পারদর্শিতা ও দক্ষতা বারংবার মুগ্ধ করে দর্শকদের। তাঁর কণ্ঠে মানুষ শুনেছেন বহু রবীন্দ্রসঙ্গীত। বেশ পছন্দও করেছেন তাঁরা।
অপরদিকে, নজরুল ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ থেকে নজরুলগীতির উপর ডিপ্লোমা করেছেন ফারজানা সিফাত। বর্তমানে তিনি একজন সফল গায়িকা হওয়ার পাশাপাশি, লন্ডনের একজন সঙ্গীতশিক্ষিকাও বটে। ফারজানার মতে, ‘বিলেতে এসে যখন সঙ্গীত শিক্ষকের পেশায় যুক্ত হই, তখন লন্ডনের নতুন প্রজন্মকে কীভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত বা নজরুলসঙ্গীতে উৎসাহিত করা যায় তা ভাবছিলাম। কথা, সুর ঠিক রেখে শুধু আয়োজনটা বদলে দিলেই নতুনরা আকৃষ্ট হয়।’ সেই বিষয়টাই তাঁকে সাহায্য করেছে এই উদ্যোগে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মনে কি দ্বিধা’ এবং কাজী নজরুল ইসলামের ‘সে চলে গেছে বলে’ গানদুটি নিয়ে মেলবন্ধনের এই কর্মযজ্ঞে নেমেছেন তাঁরা দু’জনে। ফারজানা জানান, ‘এই গানগুলো বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও প্রতীকী মূল্য বহন করে, যা আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীতের মূল্যবোধ ও মনোভাবের মধ্যে তুলে ধরতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, রবিঠাকুর এবং নজরুলের গান একত্রিত করে বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাংলা সঙ্গীত এবং সাহিত্যের বহুমুখী ঐতিহ্যকে প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত করা যায়। শুধু সাংস্কৃতিক বর্ণনই নয়, বরং বাংলার যৌথ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাগুলির একটি গভীরতর উপলব্ধিকে উৎসাহিত করে।’
রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নজরুলগীতি আলাদা আলাদাভাবে পছন্দ করেন বহু মানুষ। কিন্তু এই দুইধরনের সঙ্গীতের মেলবন্ধন স্বাভাবিকভাবেই সঙ্গীত এবং কাব্যিক ঐতিহ্যের একটি সুন্দর সংমিশ্রণ তৈরি করে। দুই দক্ষ গায়িকার সুমধুর কণ্ঠে যোগ্য সম্মান পেয়েছে এই দুই গান। শিল্পের মাধ্যমেই যে আন্তর্জাতিক আঙিনায়, একতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়ে থাকবে এই উদ্যোগ, সেবিষয়ে একমত দুই গায়িকাই।
দুই বাংলার মানুষ ও শিল্পী সম্প্রদায়কে একত্রিত করেছে ফারজানা-ইমনের এই শ্রুতিমধুর উদ্যোগ। ‘সারেগামা ইন্ডিয়া লিমিটেড’ প্রযোজিত এই গান মুক্তি পেয়েছে ‘সারেগামা বেঙ্গলি’র অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে।