Masakkali Review: লকডাউন নয়, গঙ্গারা রোজকার দমবন্ধ জীবনে খোলা জানলা

করোনাকালের ওই ভয়ঙ্কর, দমবন্ধ করা সময়টা আমরা কাটিয়ে এসেছি বেশ অনেকদিন আগেই। তবু এখনো সেই সময়টা মনে পড়লেই কিছু চাপা কান্না, মৃদু দীর্ঘশ্বাসের অনুরণন চলে আমাদের কানের কাছে। এই চূড়ান্ত বিশ্রী সময়টা থেকে কি জীবনমুখী রসদ পাওয়া সম্ভব কখনো?

গতকাল, ২৫শে জুন, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের মঞ্চে ছিল ‘কলকাতা রমরমা’ নাট্যগোষ্ঠীর নাটক ‘মাসাক্কালি’র শো। বছরকুড়ির গোবেচারা গঙ্গা ওরফে কৃষ্ণেন্দু থাকে তার পিসি কাদম্বরীদেবীর সঙ্গে। পিসির সঙ্গে তার রসায়ন এক্কেবারে ‘টম-জেরি’র।
লকডাউনের মধ্যে একদিন উল্টোদিকের বাড়ির চিঠি ভুল করে এসে পৌঁছয় তাদের কাছে। কৌতূহলবশে, তারা পড়েও দেখে তা। আর তারপর থেকেই গঙ্গার ‘মাসাক্কালি’ হয়ে ওঠার যাত্রার শুভারম্ভ।

পিসির কথায় অর্জুন মিত্তালের লেখা সেই চিঠি গঙ্গা পৌঁছে দেয় মধুছন্দাদিকে। তারপর প্রায়শই এপাড়ার চিঠি ওপাড়ায়, আর ওপাড়ার চিঠি এপাড়ায় পৌঁছতে পৌঁছতে, উল্টোদিকের বারান্দার মানুষটার সঙ্গে অল্পস্বল্প গল্প করতে করতেই হাসিমজার সীমানা ছাড়িয়ে বাড়ে আকর্ষণ। গঙ্গা আর গঙ্গার পিসি ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে অর্জুন-মধুছন্দার ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সম্পর্কের সঙ্গে।

গোটা নাটক জুড়ে মঞ্চে দাপিয়ে বেড়িয়েছে চার-চারটে আগাগোড়া মিষ্টি চরিত্র। তাদের জীবনে সমস্যা আছে, দুঃখ আছে, রাগ আছে, ইগো আছে, মনের কোণে জমিয়ে রাখা ভালবাসাও আছে। মাঝে উঁকি মেরেছে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, কাজ হারানোর মত গভীর কিছু সমস্যাও।
গঙ্গা, গঙ্গার পিসি, অর্জুন মিত্তাল আর মধুছন্দার চরিত্রে সাদামাটা অথচ মায়ামাখানো অভিনয় করেছেন অয়ন দত্ত, পৌলমী চট্টোপাধ্যায়, কৌস্তুভ মুখোপাধ্যায় এবং আভেরী সিংহ রায়। স্বল্প পরিসরে ফটিকের চরিত্রে মন কেড়েছেন প্রদ্যুম্ন বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই নাটকের দুটো প্রধান দিকের কথা বলতেই হয় বিশেষ করে। আলো এবং গানের ব্যবহার। শুভঙ্কর দে-র আলোকসজ্জা এবং আকাশ চক্রবর্তীর কথায়, পরিধির টাইটেল ট্র্যাক প্রাণ দিয়েছে এই নাটককে। জয় সরকারের আবহও বেশ লেগেছে।
আর গোটা নাটকটা জন্ম নিয়েছে যাঁর হাত ধরে, যাঁর যত্ন আর পরিচর্যায় লকডাউন কেটে যাওয়ার এতদিন পরেও এই নাটক সমান প্রাসঙ্গিক, সেই কন্যকা ভট্টাচার্য ‘ম্যাজিক’ দেখিয়েছেন এই নাটকে। দক্ষ রাঁধুনীর সাবলীল ভঙ্গিমায় তিনি সঠিক পরিমাণে মিশিয়েছেন হাসি-কান্নার মশলা।

আসলে এ নাটকের প্রেক্ষাপট লকডাউন বা অতিমারীর আবহ হলেও, নাটকে দৃশ্যমান সমস্যা, হতাশা, অভিমান, অবসাদ তো কেবল সেই সময়টুকুর নয়! আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অজান্তেই আমরা হারাতে বসি কাছের মানুষকে, কখনো হাত ধরি ভুল মানুষের, কখনো আটকে থাকি ফেলে আসা সময়ে, কখনো আচমকাই হারিয়ে ফেলি নিজের কিংবা নিজের পরিবারের ভরসাস্থল, চাকরীটুকু!

এত সমস্যার মাঝেও ‘মাসাক্কালি’ জীবনের গল্প বলে। হতাশার মেঘ ছিঁড়ে রোদের আভা মাখার গল্প বলে। সবটুকু অহং বিসর্জন দিয়ে ভালবাসাকে কাছে টেনে নেওয়ার গল্প বলে। আর বলতে বলতেই, পিসি-গঙ্গা-অর্জুন-মধুছন্দাকে ছাপিয়ে, আমাদের গল্প বলে ‘মাসাক্কালি’।

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

    View all posts
Scroll to Top