‘শুধু থিয়েটার নয়, সুরক্ষা চাই গোটা সমাজে’, তিতাস-বেণীদের পাশে চূর্ণী

‘থিয়েটারের জগতে সুরক্ষা চাই’, বেশ কিছুদিন ধরে এমনটাই দাবী তুলেছিলেন তিতাস দত্ত, বেণী বসুরা। ধর্ষণে অভিযুক্ত সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়কে মঞ্চে ফিরিয়ে আনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই। পাল্টা যুক্তিও শোনা যাচ্ছে বেশ। আর এর মাঝেই তিতাস-বেণীদের জন্য একঝলক শান্তির বাতাস।

তর্কবিতর্কের ধারপাশ না মাড়িয়ে, তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং। আজ শুক্রবার, নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে নিজের একটি ছোটবেলার ছবি পোস্ট করেন অভিনেত্রী। সেই ছবির ক্যাপশনেই তিনি লেখেন তাঁর কথা।
এর আগে 71/1 MB-কে তিতাস জানিয়েছিলেন, ‘বাংলা থিয়েটারের জগতে এমন বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ধারাবাহিকভাবে শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্থা করে চলেছেন।’ কিছুটা এমনই সুর অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখাতেও। তবে কেবল থিয়েটার জগতে নয়, গোটা সমাজে, প্রত্যেকটা বাড়ীতে, ঘরে ঘরে সুরক্ষার কথা বলেছেন তিনি (‘Not just for a safe space in theatre, but for a safe space in the society at large, in every home, in every room.’)।

অভিনেত্রী জানিয়েছেন, খুব ছোটবেলায় একবার যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। নাম না করেই তিনি লেখেন, যাকে তিনি বিশ্বাস করতেন সম্পূর্ণভাবে, সেই ‘মানুষ’টিই গভীর, চিরকালীন একটা ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়েছিল তাঁর মনে। আরো বহু মানুষের মতই চূর্ণীও কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি সেই সময়ে, কোনোরকম শাস্তি হয়নি সেই লোকটির।
আসলে, থিয়েটার জগতের সুরক্ষা নিয়ে একটি পিটিশন তৈরী করেছিলেন বেণী বসুরা। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায়, চেয়েও সেই পিটিশনে স্বাক্ষর করতে পারেননি অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমার এই পোস্টটাই আমার স্বাক্ষর হয়ে থাক!’ বেণী বসুকে সেই পোস্টে ট্যাগও করেছেন তিনি।

অভিনেত্রী যোগ করেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, সেই লোকটি কর্মফল পাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তার অপরাধ স্বীকার, ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন তিনি। যদিও, আদৌ সেই মানুষটি একটুও বদলেছে কিনা, সে বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সন্দিহান।
এই নিম্ন মানসিকতার মানুষেরা হয়ত বদলায় না কোনোদিনই, ভোগে না অপরাধবোধেও। নিজের নাম জনসমক্ষে উচ্চারিত না হলে সত্যিই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারা। তবু এই অন্ধকার জগতের মাঝে দাঁড়িয়েও, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের এই পোস্ট যে বহু মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছে, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কমেন্ট সেকশন দেখেই।
তিতাস বলেছিলেন, একটা সুরক্ষিত থিয়েটার জগতের লক্ষ্যেই তাঁদের এই লড়াই। থিয়েটারের পরিসর থেকে বেরিয়ে সমস্ত সমাজের বিরুদ্ধে লড়াইটা কি আরো কঠিন হবে তাঁদের? নাকি আরো বেশী মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা সহজ করবে তাঁদের যুদ্ধ? সে কথা হয়ত জানে কেবল সময়ই।

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

Scroll to Top