২০১৯ সালে দু’জন নারীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এক ব্যক্তি। সেই মামলা চলছে এখনো। তার মাঝেই বারংবার শিরোনামে কেন তিনি এবং থিয়েটারজগতের একাধিক ‘মহীরূহ’!
অনেকেই বুঝে গিয়েছেন, কথা হচ্ছে ধর্ষণে অভিযুক্ত সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে। ফের তাঁকে মঞ্চে অভিনয় করার সুযোগ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বহু মানুষ। জোয়ার চলছে বিপক্ষমতেরও। সুমন মুখোপাধ্যায়কে লেখা অভিনেত্রী দামিনী বসুর ‘খোলা চিঠি’ মুছে ফেলা হয়েছে এক প্রথমসারির সংবাদসংস্থার অনলাইন পোর্টাল থেকে। সেই নিয়েও ক্রমাগত চলছে তরজা। এসবের মধ্যে ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে থিয়েটারজগত? আদৌ কি তা সুরক্ষিত?
এসব নিয়ে কথা বলতেই 71/1 MB যোগাযোগ করেছিল দামিনী বসু, তিতাস দত্তদের সঙ্গে। তিতাস জানান, ‘২০১৯ সালে প্রথম অ্যাঞ্জেলা ও রাজেশ্বরী সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, থানায় যান, রিপোর্ট করেন। সেইসময়ে একটি সভা ডাকা হয়েছিল রাণু ছায়ামঞ্চে, সেখানে অনেক আলাপ-আলোচনাও হয়। এরপর সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। কিন্তু জামিনের পরে, তাঁর চাকরী চলে গেলেও থিয়েটারের মঞ্চে তাঁকে নানাভাবে ফিরিয়ে আনার, পুনর্বাসন দেওয়ার চেষ্টা মাঝেমধ্যেই করা হচ্ছে। এর আগের দু’বারও আমরা প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু হয়ত এইমাত্রায় যায়নি সেই প্রতিবাদটা।’
মামলা চলছে আইনিপথে, তাহলে কীসের বিরুদ্ধে দামিনী-তিতাসদের আন্দোলন? তিতাস বলেন, ‘থিয়েটারের যাঁরা হর্তা-কর্তা-বিধাতা, অপরাধীকে নিয়ে কাজ না করার কথা বারবার তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব যেন নিপীড়িত, অত্যাচারিতদের! এই লম্বা তালিকায় সুমন মুখোপাধ্যায় এবং বিলু দত্তও রয়েছেন। উৎপল দত্তের একটি ঐতিহাসিক নাটকে এই অপরাধী, ধর্ষককে মঞ্চে তুলেছেন।’
ইতিমধ্যেই নিজেদের ভুলস্বীকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছেন বিলু দত্ত। এবিষয়ে কী মত তিতাসের? তিতাস বলেন, ‘হ্যাঁ, একটা ওয়েব পোর্টালে দেখলাম তিনি বলেছেন, একটা গান জানা লোকের দরকার ছিল, নাটকের একসপ্তাহ আগে নাকি হঠাৎ করে তাঁরা সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েছেন। কেন! কলকাতা মঞ্চে গান গায় এমন অভিনেতা আর নেই! একজন ধর্ষককে ধরে আনতে হয়েছে! সেটাও আবার ভুল করে!’
দিনকয়েক আগেই তাঁর একটি ওয়েবসিরিজের প্রশংসা করেছিলেন নাটকটির নির্দেশক সুমন মুখোপাধ্যায়। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে নড়েননি দামিনী। ভুলস্বীকারের এই পোস্ট নিয়ে কী মত তাঁর? “ওরা দু’লাইনে বলছে ‘আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে, ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি।’ ওরা অলরেডি পুরোটাকে ধামাচাপা দিতে চাইছে। এত কাণ্ড করার পরে ওরা বলছে আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে!”, প্রতিক্রিয়া দামিনী বেণী বসুর।
তিতাস যোগ করেন, “২০১৯ সালে সুমন মুখোপাধ্যায়ের রীতিমত লম্বা একটা বক্তব্য আছে, যেখানে বলা আছে, ‘দুর্ভাগ্যজনক একটা ঘটনা ঘটেছে, সবরকমভাবে আমরা যারা সারভাইভার তাদের পাশে আছি!’ তিনি তো বাংলার ওয়ান অফ দ্য ব্রাইটেস্ট, তাঁর স্মৃতিশক্তি তো এত কম নয়! ভুল করে কী করে তিনি সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়কে মঞ্চে তুললেন!”
তবে একা সুদীপ্তই নন, তিতাস একইসঙ্গে বলেন, ‘বাংলা থিয়েটারের জগতে এমন বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ধারাবাহিকভাবে শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্থা করে চলেছেন। একাধিক মহিলাকে হেনস্থা করেছেন, যাদের মধ্যে আমিও একজন। সুপ্রিয় সমঝদার, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়, সাম্প্রতিককালে পকসো কেসে অভিযুক্ত রাজা ভট্টাচার্য্য, এরা কেউ ব্যতিক্রম নয়।’
তিতাস বলছেন, একটা সুরক্ষিত থিয়েটার জগতের লক্ষ্যেই তাঁদের এই লড়াই। কিন্তু অনেকেই সুর তুলেছেন ‘ইনোসেন্ট আনটিল প্রোভেন গিল্টি’র। কিন্তু কতদিন চলবে এই মামলা? পাঁচবছরেও কেন ঘোষণা হচ্ছে না রায়? এর উত্তরে হয়ত চুপ করেই থাকবে ‘অন্ধা কানুন’!
বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।