Entertainment

অভিনয় করেছেন সিনেমায়, সিরিজেও, দেখেছেন তো, চিনেছেন কি?

আচ্ছা, সৃজিত মুখার্জীর ‘এক যে ছিল রাজা’ সিনেমাটা দেখেছেন আপনারা? নিশ্চয়ই দেখেছেন! কিন্তু যীশু-জয়া-অনির্বাণ-রুদ্রনীল, বা অঞ্জন দত্ত-অপর্ণা সেন ছাড়া তেমন করে মনে আছে আর কাউকে? অথচ কারোর অভিনয়েই কিন্তু ফাঁক ছিল না কোনো।

ছোট ছোট প্রত্যেক কারিগর, যাঁদের অনুপস্থিতিতে হয়ত তৈরীই হত না ইমারতগুলো, তাঁদের আমরা গ্রাহ্য করি না স্বাভাবিক প্রবৃত্তিতেই। কারণ, ব্রেখ্‌টের মত করে ভাবি না আমরা সবাই। ভাবি না, সত্যিই ‘রাজারা কি পাথর ঘাড়ে করে আনত?’ আসলে এতগুলো কথা বলার কারণ, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি আয়োজিত ত্রয়োবিংশ নাট্যমেলায় দেখতে গিয়েছিলাম ‘কলকাতা রমরমা’ নাট্যগোষ্ঠীর নাটক ‘ডিজনিল্যান্ড’। আর সেখানেই এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিলাম আমি।

নাটকটিতে চোখধাঁধানো অভিনয় করেছেন সকলেই। তবে ‘আনন্দদাদু’র চরিত্রটিকে দেখতে দেখতে যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও! অসমবয়সী কেয়ারটেকার কি সমবয়সী বন্ধুর সঙ্গে খুনসুটি, পুরনো স্মৃতিচারণ, কখনো মানসিক ভারসাম্যহীনতা, কখনো শিশুর মতই আবেগের বহিঃপ্রকাশ, আবার কখনো দৃঢ়সঙ্কল্প, অভিমানী বাবা – কতগুলো অবতারে যে তাঁকে মঞ্চে দেখেছেন দর্শক, তার ইয়ত্তা নেই। অথচ, একমুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি, তিনি আসলে আনন্দদাদু নন, আনন্দদাদুর চরিত্রে তিনি অভিনয় করছেন ।

অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েই পৌঁছে গিয়েছিলাম ব্যাকস্টেজে। সেখানে পৌঁছনোমাত্রই আরেক চমক, আনন্দদাদুর কথা বলা-হাঁটা-চলা-বসা, কিছু দেখেই মনে হয়নি, মেকআপের আড়ালে আসলে যিনি রয়েছেন, তাঁর বয়স আনন্দদাদুর ধারপাশও মাড়ায় না। বিস্ময়ের পরিমাণ বাড়ল বইকি! কিছুটা যেচে পড়েই আলাপ করলাম অভিনেতার সঙ্গে। অভিনেতার নাম জিৎ দাস। কিছু কথার পরেই বুঝতে পারলাম, বিস্ময়ের হিমশৈলের চূড়াটুকুমাত্র দেখেছি আমি। জানতে পারলাম, ‘এক যে ছিল রাজা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি, রাজা মহেন্দ্রর সহকারী বীরেন্দ্রর চরিত্রে।

এরপর সাধারণ মানুষ হিসেবে কৌতূহল বাড়াই স্বাভাবিক। টুকটাক আরো খানিক কথা বলতে বলতে জানতে পারলাম, মঞ্চ থেকে ক্যামেরার সামনে আসার পথটা স্বাভাবিকভাবেই খুব একটা মসৃণ ছিল না। কাস্টিংয়ের জন্য কথা বলার পরেও, বাদ পড়েছেন বহু প্রজেক্ট থেকে। এতক্ষণের ভাসা-ভাসা স্বপ্নের জগত থেকে বাস্তবেরকঠিন মাটিতে আছড়ে পড়তে পড়তে শুনতে পেলাম, কেবল তাইই নয়, সিলেক্ট হওয়ার পরে, অভিনয় করার পরেও, ছবি সম্পাদনা করার সময়ে কেটে দেওয়া হয়েছে তাঁর অভিনীত দৃশ্য। এসবের সঙ্গে এখন আবার যোগ দিয়েছে আরো এক নতুন সমস্যা। অভিনয়দক্ষতা নয়, কেবল সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ারের সংখ্যা দেখে এখন কলাকুশলীদের নির্বাচন করা হয় অনেক ক্ষেত্রেই। সেকারণেও অনেক কাজ থেকেই বাদ পড়তে হয়েছে তাঁকে। শিকার হয়েছেন পক্ষপাতেরও।

হালকা চালে কথাগুলো বলতে বলতেই, অভিনেতা জানাচ্ছিলেন, তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গির কথা। বলছিলেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি খুব বেশী মাথা ঘামাননি কখনোই। তাঁর কথায়, ‘আমি শিওর, সকলকেই এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হয়। আশা করছি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে, গুরুত্বটা বুঝবে লোকে!’

খুব ছোটবেলা থেকেই গুরু রমাপ্রসাদ বণিকের হাত ধরে অভিনয়ের হাতেখড়ি তাঁর। নানাধরনের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জিৎ লড়ছেন কেবল অভিনয়কে ভালবেসে। মঞ্চ এবং সিনেমার পাশাপাশি নানা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করেছেন ইতিমধ্যেই। ‘হইচই’ (Hoichoi) ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘স্টোনম্যান মার্ডারস’, ‘দময়ন্তী’সহ আরো বেশকিছু সিরিজে কাজ করেছেন তিনি। কাজ করেছেন ‘ক্লিক’ (Klikk) ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও। দেবাশিস সেনশর্মা পরিচালিত ‘শব চরিত্র’, বাংলার প্রথম স্কেচ কমেডি, সৌমিত দেবের ‘নাটক করিস না তো’ সিরিজে এবং সম্প্রতি ‘রাজা রানী রোমিও’ সিরিজেও অভিনয় করেছেন জিৎ। কাজ করেছেন ‘জি ফাইভ’ (Zee5) ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘কালী (সিজন ২)’-তেও।

এত সমস্যার সম্মুখীন হয়েও সেসব কোনো ক্ষোভ নেই তাঁর মনে, কেবল গলায় ঝরে পড়ছিল একটাই আক্ষেপ, ‘ইন্ডাস্ট্রি এখনো জুনিয়র আর্টিস্টদের মানুষ বলে মনে করে না। এই দুঃখটা কিছুতেই ভোলা যায় না।’

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

    View all posts

Debasmita Biswas

বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।