Live Entertainment & Love Lifestyle

Friday, April 11, 2025
Theatre

কাব্য দিয়েই মন-মঞ্চ জয় করলেন ‘বীরাঙ্গনা’রা

      সম্প্রতি একটা ওয়েবসিরিজে চান্দ্রেয়ী ঘোষের মুখে একটা সংলাপ ছিল, ‘চেঁচিয়ে না বললে মেয়েদের কথা অনেকেই শুনতে পান না।’ আর যাঁরা পান না, তাঁদের সপাটে জবাব দেওয়াই হয়ত ছিল ‘ইচ্ছেমতো’ নাট্যদল অভিনীত ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ নাটকের লক্ষ্য।

গতকাল, ১৭ই জানুয়ারি, গিরিশ মঞ্চে অভিনীত হয়েছে ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’-এর এগারোটি সর্গ থেকে নাটকের পরিচালক তূর্ণা বেছে নিয়েছিলেন পাঁচটি চরিত্র। আর সেই নাটকেই মঞ্চজুড়ে অভিনয় করে মনজুড়ে থেকে গেলেন অভিনেত্রীরা। নাটকের প্রথমেই পরিচয় দেওয়া হয় পাঁচ বীরাঙ্গনার। ফলে কাব্য বা পুরাণ না জানা দর্শকও অনুভব করতে পারেন নাটকটা। পরিচয়ের জন্য ভাষ্যের সঙ্গে সাবলীল ও পরিমিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে গানেরও। ভাল লেগেছে সহজবোধ্য অথচ ক্লাসিকের সান্নিধ্যে থাকা সংলাপগুলির ব্যবহারও।

লক্ষ্মণকে ভালবেসে প্রেম নিবেদন করেছিলেন সূর্পনখা (ঋত্বিকা নাথ), গুরুপত্নী হয়েও সোমদেবের প্রেমে পড়েছিলেন তারা (সুপর্ণা দাস), স্বামী সত্যরক্ষার্থে ব্যর্থ হলে তাঁকে ছেড়ে কথা বলেননি কৈকেয়ী (তূর্ণা দাশ), স্বামী জয়দ্রথের প্রাণভয়ে ভীত হয়েছিলেন দুঃশলা (সুলগ্না নাথ), পুত্র প্রবীরের মৃত্যুতে এবং নীলধ্বজের অরাজোচিত আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন জনা (অঙ্কিতা মাঝি)। তাঁর আকুতি, প্রেম, দম্ভ, শোক, নিজের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্ব, অসহায়তা – সবটাই ফুটিয়ে অভিনেতারা ফুটিয়ে তুলেছেন অত্যন্ত দক্ষভাবে। তবু কোথাও যেন একটু বেশীই মন ছুঁয়ে যায় কৈকেয়ী, দুঃশলা এবং জনার চরিত্র তিনটি।

আলাদা করে বলতে হয়, আলো (সৌমেন চক্রবর্তী) এবং সঙ্গীতের (দেবদীপ মুখার্জী) ব্যবহার। প্রতি চরিত্রের জন্য আলাদা আলাদা আলোর ব্যবহার চরিত্রদের আরো তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। ‘ক্লাসিক’ সাহিত্যের উপযোগী গান এবং সুর মসৃণভাবে ছড়িয়ে ছিল গোটা নাটকজুড়েই। তাছাড়া, ভাষ্যপাঠে বিভিন্ন চরিত্রের উপযোগী অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলে মন কেড়েছেন অয়ন ঘোষও। আর এখানেই হয়ত সাফল্য নাটকের সৃজনশীল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সৌরভ পালোধীর।

নাটকের জগতে সাহিত্য নিয়ে কাজ হয় প্রায়শই। কিন্তু মধুসূদন দত্তের কাব্যাংশকে মঞ্চে তুলে ধরার এ ভাবনা বেশ চমকপ্রদ। নাটক-শেষে পাঁচ বীরাঙ্গনার হাতে দেখা যায় একটি ঘোষণা। তাতে বিদ্রোহের মত জ্বলতে থাকে তাঁদের বুদ্ধিকে নিয়ে সমাজের তাচ্ছিল্যের প্রতি একরাশ অবজ্ঞা। নাটকটা দেখতে দেখতে দেড়ঘন্টার জন্য দিব্যি পৌঁছে যাওয়া যায় মহাকাব্যের যুগে। এই স্মার্ট-সোয়াইপের যুগে ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ থেকে যায় স্থায়ী ওয়ালপেপার হয়ে।

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

    View all posts

Debasmita Biswas

বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।