সবুরে যে সত্যিই মেওয়া ফলে, তা প্রমাণ করলেন অমিত শর্মা। চারবছর পর মুক্তি পেয়ে ছক্কা হাঁকাল ‘ময়দান’।
একজন কোচ, যাঁর জীবনের ধ্যানজ্ঞান কেবল ফুটবল, যিনি নিজেই বলেন যে তিনি কোচিং ছাড়া আর কিছু পারেন না, অথচ যাঁর কোচিং কেরিয়ারে হারের সংখ্যা কম নয়, সেই মানুষটার জীবন কি সিনেমার মত হতে পারে?
হতে পারে। কেবল জীবন সিনেমার মতই নয়, তাঁকে ঘিরে বানানো সিনেমাটাও জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে কলাকুশলীদের স্পর্শে। ভারতীয় ফুটবলের কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমকে (অজয় দেবগন) ঘিরেই এই ছবির গল্প। ফুটবল ফেডারেশনের ‘দাদাগিরি’ মানতে যিনি নারাজ। রাজ্য-ক্লাব নির্বিশেষে, কেবল দক্ষতা এবং নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার ক্ষমতাকে মাপকাঠি করেই যিনি বাছতে চান জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের।
স্বাভাবিকভাবেই, এ কাজ করতে গিয়ে বাধা আসে বিভিন্ন স্তর থেকে। ফেডারেশনের সদস্য শুভঙ্কর সেনগুপ্তের (রুদ্রনীল ঘোষ) মত অনেকেই বিশ্বাস করেন, অবাঙালি কোচ এবং খেলোয়াড়, ভারতীয় ফুটবল টিমের প্রয়োজন নেই কাউকেই। চূড়ান্ত অসহযোগিতা সত্ত্বেও, ভারতের ফুটবলকে বিশ্বের দরবারে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন সৈয়দ আবদুল রহিম। পেরেছিলেন কি? সে উত্তর জড়িয়ে আছে এই টানটান ছবির পরতে পরতে।
ছবিতে দেখানো হয়েছে একাধিক ফুটবল ম্যাচের দৃশ্য। প্রতিটি গোলের সময় প্রেক্ষাগৃহভর্তি দর্শকের ‘গোওওওল’ চিৎকারই প্রমাণ করে দিচ্ছিল, ঠিক কতটা যত্ন করে অমিত শর্মা বুনেছেন দৃশ্যগুলো। অসংখ্য হারা-জেতা ম্যাচ দেখতে দেখতে টের পাওয়া যাচ্ছিল শিরায় শিরায় অ্যাড্রিনালিনের গতি। প্র্যাকটিস, কোচ-খেলোয়াড়ের সমীকরণ, খেলার সঙ্গে মিশে যাওয়া রাজনীতির ছবি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক।
অজয় দেবগন, প্রিয়ামণি, প্রত্যেক খেলোয়াড়সহ সকলেই দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তা সত্ত্বেও, রুদ্রনীল ঘোষ এবং গজরাজ রাওয়ের অভিনয় মুগ্ধ করে রেখেছিল সমস্ত ছবিজুড়ে। পরিবারের সঙ্গে সৈয়দ আবদুল রহিমের সম্পর্কের সমীকরণও বেশ আকর্ষণীয়। ক্যামেরার কাজ চোখ টেনেছে বারংবার।
ছবির অনেকটা অংশ জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে কলকাতা। সংলাপের বেশ কিছু অংশে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলা ভাষাও। অথচ বহু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ছয়ের দশকের কলকাতার নির্যাসের যেন অভাব রয়ে গেল। তাছাড়া দু’জন বাঙালির পরস্পরের সঙ্গে একান্তে অন্যভাষায় কথা বলার দৃশ্যগুলিও কিছুটা অস্বস্তিকর। তবে অন্যরকম লেগেছে আবহ এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের কাজ।
সৈয়দ আবদুল রহিমের জীবনে মসৃণভাবে ঘটেনি কোনো কিছুই। একটা স্বপ্নের পিছনে দৌড়নোর জন্য তাঁকে উজাড় করে দিতে হয়েছে নিজের সমস্ত জীবন। ছবি শেষের পরে, চিরসবুজ এই কোচ এবং তাঁর শিষ্যদের ছবি দেখতে দেখতে ভিজে যেতেই পারে চোখের কোল। স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া মানুষটিকে ফের মানুষের মনে ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তত একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য পরিচালক অমিত রবীন্দ্রনাথ শর্মার।
বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।