Chemistry Mashi Review: সম্পর্কের রসায়নের সংজ্ঞা বদলালেন সৌরভ
দেবশ্রী রায়ের কামব্যাক হিসেবে এই সিরিজ নিয়ে ‘হইচই’ তো ছিলই, তারই সঙ্গে যোগ দিয়েছিল অভিনেতা-পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তীর নাম। ছয়পর্বের ছোট্ট এই সিরিজ মন জিততে পারল কি দর্শকদের?
মাঝবয়সী এক গৃহবধূ সুচরিতা, সংসারই ছিল যাঁর ধ্যানজ্ঞান, তিনি হঠাৎ একদিন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনলাইনে, বিনা পয়সায় কেমিস্ট্রি পড়াবেন। সেইমত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চ্যানেলও খোলেন তিনি। আর তারপরেই, ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিসরে তিনি সম্মুখীন হন বাধার। যে সমস্যার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি, সেই সমস্যাই হাজির হয় তাঁর সামনে। কারণ আক্ষরিক অর্থেই, ‘মুদীর দোকান শপিংমলের বিপদের কারণ’ হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে জয় করে আদৌ নিজের চ্যানেলে সুচরিতা পড়াতে পারবেন কিনা, সেই গল্পই বলে ‘কেমিস্ট্রি মাসি’।
অনেকসময়ই, অতীত এবং বর্তমানের ঘটনা সমান্তরালভাবে দেখালে, দর্শকদের জন্য কিছুটা কষ্টসাধ্য হয় তা বোঝা। কিন্তু এই সিরিজের ক্ষেত্রে তা হয়নি। অচেনা মহিলার মোবাইল নম্বর সেভের নাম থেকে শুরু করে নানা খুঁটিনাটিতে ধরা পড়েছে পরিচালকের যত্ন। শিক্ষাব্যবস্থার দুর্নীতি, সামাজিক ট্যাবু, তথাকথিত শিক্ষিতদের মানসিক বিকাশের অভাব, বেসরকারি সংস্থার ব্যবসায়িক মনোভাব, রাজনীতি, মানুষের স্বার্থপরতা, পুরুষতন্ত্র – এরকম অসংখ্য সংবেদনশীল ইস্যুকে একপাতায় আঁটতে গেলে হয়ত ঢুকে পড়তে হয় মানুষের মনের মধ্যে। দুই প্রজন্মের মানুষের মনস্তত্ত্ব ফুটিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন পরিচালক।
দেবশ্রী রায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, ঋত্বিকা পাল, সৌম্য মুখার্জী, শ্রেয়া ভট্টাচার্য, সপ্তর্ষি মৌলিক, আর্যা ব্যানার্জীসহ সকলের অভিনয়ই অত্যন্ত সাবলীল। তবে সবচেয়ে মন কেড়েছে বর্ষীয়ান অভিনেতা বিনয় শর্মার অভিনয়। নেগেটিভ চরিত্রে ধীর, স্থির, শান্ত অথচ কূটনীতিক ভঙ্গিতে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন মি. আগরওয়ালের চরিত্র। সিরিজের চিত্রনাট্যও ছিল বেশ টানটান। তবে পুলমার চরিত্রটি কিছু কিছু জায়গায় বড় অদ্ভুত লেগেছে। বিচক্ষণতার এতটা অভাব অবাক করতে পারে দর্শককে। সকলকে বিপদের মধ্যে রেখে ঈশানীর মত চরিত্রের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও যেন একটু দৃষ্টিকটু। তবে এসব ছোটোখাটো বিষয়ের জন্য গল্পের রসাস্বাদনে ব্যাঘাত ঘটে না একেবারেই। কেবল স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিরিজ হওয়া সত্ত্বেও আরো কয়েকটি জায়গায় একটু সম্পাদনার দাবী রাখে এ সিরিজ।
পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, অমিত-যশের সুরে, সিরিজের টাইটেল ট্র্যাক গেয়েছেন ইমন চক্রবর্তী। সিরিজটি দেখা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছুক্ষণ গানটির অনুরণন চলে মনের মধ্যে। সিরিজের সংলাপও ভাল লেগেছে বেশ।
তবে পরিচালক নিজের কথা রেখেছেন, কেবল সহজ উপায়ে রসায়ন পড়ানোই এ সিরিজের উপজীব্য নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সমস্যার পাশাপাশি সম্পর্কের রসায়নগুলোও ঘেঁটে দেখেছেন তিনি। তাই রসায়নের নাম শুনলেই যাঁদের গায়ে জ্বর আসে, নিশ্চিন্তে তাঁরাও দেখে ফেলতে পারবেন এই সিরিজ।