Dukaan: মাতৃত্বের সীমানা বেঁধে দেবে কে?

কিছু কিছু মানুষ সারাজীবন ‘আনক্রেডিটেড’ থেকে যান। তাঁদের অবদানের কথা, অস্তিত্বের কথা মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না কেউ। সেই মানুষদের তালিকায় যেমন আছেন নাম-না-জানা শিল্পীরা, তেমনই রয়েছেন সারোগেট মায়েরাও।

যাঁরা নিজেদের গর্ভে যত্নে, স্নেহে লালনপালন করে বড় করে তোলেন একটি ভ্রূণকে, মায়ের সম্মান কেন পান না তাঁরা? কেন পান না সেই সন্তানকে ভালবাসার অধিকার? সিদ্ধার্থ-গরিমা পরিচালিত ‘দুকান’ আসলে এক নারীর গল্প বলে। গর্ভের ভ্রূণকে যে ভালবেসে ফেলেছে, অন্তরালে থাকার বিন্দুমাত্র বাসনা যার নেই।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি গুজরাটকে পরিণত করেছে ‘গর্ভ-ব্যবসা’র মূল ঘাঁটিতে। নয়ের দশকের গোড়ার দিকে সে রাজ্য হয়ে উঠেছিল দেশের প্রথম ‘সারোগেসি হাব’। বিদেশের মানুষ কমখরচায় এরাজ্যে আসত সারোগেট মায়ের খোঁজে। ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে আবেগের পরিমাণও। এই ছবির গল্প বেড়ে উঠেছে সেই পশ্চিমা রাজ্যেরই বুকে। ‘গর্ভ ভাড়া’ দেওয়া এক নারী, অগ্রাহ্য করতে পারে না তার নাড়ীর টানকে। যদিও সে সন্তান তার নিজের নয়, তবু সেই সন্তানকে নিয়ে সে পালিয়ে যেতে চায় অনেকদূরে।

নিজেদের সমস্যা এড়াতে মানুষ নিয়ম তৈরী করে। কিন্তু প্রকৃতির সামনে যে সে নিয়ম অসহায়! বিজ্ঞান, ব্যবসা প্রকৃতির নিয়মে মাথা নোয়ায় ভালবাসার কাছে। বিশেষত কোনো শিশুকে ভালবাসার ক্ষেত্রে, যে শিশুটি তাঁর সন্তান হয়েও আসলে তাঁর কেউ নয়।

এই ছবি স্রষ্টাদের সম্মান জানাতে শেখায়। শিল্পী হোন বা সারোগেট মা, পয়সার জন্য হলেও, তাঁদের সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে। যাঁরা পেশাগত কারণে কিছু সৃষ্টি করেন, তাঁদের সঙ্গেও তো সেই পণ্যের একটা আত্মিক যোগ তৈরী হয়! আসলে আমাদের সকলের মধ্যেই একজন সারোগেট মা লুকিয়ে থাকেন।

২০১৮ সালে বাণিজ্যিক সারোগেসিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের প্রভাব আদৌ কী? এই আইন একজন নারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। কেউ কি আদৌ তাঁর সন্তানের সারোগেট মায়ের নামটুকু বলতে পারবেন? যাঁরা এতদিন ধরে সেই সন্তানদের গর্ভে ধারণ করছেন, তাঁদের কথা সর্বসমক্ষে তুলতে এত অনীহা কীসের মানুষের? এমনই সব অতি সাধারণ অথচ জটিল কিছু প্রশ্ন তুলতে চলেছে ‘দুকান’।

মণিকা পানওয়াড়, সিকান্দার খের অভিনীত এই ছবির সঙ্গে যুক্ত মোনালি ঠাকুর, সোহম মজুমদারের মত বঙ্গসন্তানেরাও। এই ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে আগামী ৫ই এপ্রিল।

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

    View all posts
Scroll to Top