Oti Uttam Review: বছরচল্লিশ পরেও তিনি একইরকম ‘উত্তম’

উত্তমকুমারকে বড়পর্দায় দেখা যাবে ফের, আপামর বাঙালি চিরকালীন যতকিছু আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখেছে, এ বোধহয় তাঁদের মধ্যে একেবারে উপরে। সেই স্বপ্ন সত্যি হলে তার ফল ‘অতি উত্তম’ ছাড়া আর কী-ই বা হতে পারে!

এক সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে কৃষ্ণেন্দু (অনিন্দ্য সেনগুপ্ত) গবেষণা করছে উত্তমকুমারকে নিয়ে। মহানায়কের ভক্ত হলেও ছেলের পাগলামিতে সায় দিতে নারাজ তার বাবা-মা (শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, লাবণী সরকার)। বন্ধু গৌরব (গৌরব চট্টোপাধ্যায়) অবশ্য সঙ্গ দেয় সর্বক্ষণই। অন্যদিকে, আধুনিকা সোহিনী (রোশনি ভট্টাচার্য্য) উত্তমকুমার বা কৃষ্ণেন্দু, কাউকে নিয়েই মাথা ঘামায় না বিশেষ। ‘ফ্রিকোয়েন্সি’ একেবারেই মেলে না তাদের। তাহলে এ ছবিতে প্রেম জমবে কীভাবে?

জমবে, জমবে। কারণ এ ছবিতে ‘লাভগুরু’র ভূমিকায় আছেন স্বয়ং মহানায়ক! তাঁর হাসির যে সত্যিই ‘সামাজিক প্রভাব’ আছে, তা বোঝা গেল ফের। বড়পর্দায় মহানায়ককে প্রথমবার দেখার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশই বলে দিচ্ছিল, রজত দলুই এবং তাঁর ভিএফএক্স টিমের খাঁটি পরিশ্রম মাটি হয়নি।

তবে কেবল ভিএফএক্সের কামাল নয়, কামাল করেছে গৌরব, অনিন্দ্য, রোশনি, লাবণী, শুভাশিসের ‘রিফ্লেক্স’। গৌরব চট্টোপাধ্যায়কে অন্যরকমভাবে এ ছবিতে ব্যবহার করেছেন সৃজিত। দিব্যি জমেছে অনিন্দ্য-গৌরব রসায়নও। কেবল কমেডির দৃশ্যগুলিতে নয়, এ ছবি দেখার সময়ে হাসি কারোর মুখ থেকে মুছবে না। সহ-অভিনেতা, সহ-অভিনেত্রীদেরও বেশ লেগেছে এ ছবিতে।

বেশ লেগেছে কৃষ্ণেন্দুর প্ল্যানচেটের প্রক্রিয়া। আর এপারে এসেই মহানায়কের মুখে ‘ডিসক্লেমার’ও লেগেছে ভালই। দু’একটি দৃশ্য ছাড়া বেশ সাবলীল রোশনি ভট্টাচার্য্য। সৃজিত মুখার্জীর যেকোনো ছবির অন্যতম শক্তি সংলাপ। এ ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। উত্তমকুমারকে দেখতে দেখতে মনেই হচ্ছিল না, এ ছবির জন্য এ সংলাপ তিনি বলেননি।আলাদা করে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুর্নিশ জানাতেই হবে,কারণ তার ডাব করা মহানায়কের ডায়লগ বড় পর্দায় কাঁটায় কাঁটায় উত্তম কুমারের ঠোঁটের সাথে মিলে গেছে।সেখানে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কতটা ভালো কাজ করেছে সেটাও আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

তবে ‘লাভগুরু’ হয়েও প্রথমে তাঁর দেওয়া বুদ্ধিটি যেন ঠিক ‘মহানায়কোচিত’ নয়।যদিও নতুন প্রজন্মের কাছে সেটা ভালো লাগতেই পারে। তাছাড়া, ‘ফ্রিকোয়েন্সি’ না মেলা দুটো মানুষের রসায়ন বদলের সমীকরণ নিয়ে দ্বিমত থাকলে সেটা দর্শকের নিজের সিদ্ধান্ত!কিন্তু গল্পটা এতটাই ভালো যে হলে বসে আপনার এই দিকে নজর যাবেই না। কারণ স্ক্রিনে তখন মহানায়কের ক্যারিশমা আপনার দৃষ্টি আটক করে নেবে।

সপ্তক সানাই দাসের কম্পোজিশনে গানগুলো এ ছবি দেখার আকর্ষণ যেন বাড়িয়ে দিয়েছে আরো অনেকটাই। চমৎকার লেগেছে সাউন্ডের কাজ এবং প্রবুদ্ধ ব্যানার্জীর আবহ, তবে কয়েকটি জায়গায় হয়ত আরো একটু সম্পাদনার সুযোগ ছিল।

আক্ষেপ একটাই, সরকারি উদ্যোগে পুরনো বাংলা ছবি সংরক্ষণ করলে, এ ছবি হয়ত এগোতে পারত আরো কয়েকধাপ। তবে সৃজিতের দক্ষ পরিচালনা এবং কলাকুশলীদের পরিশ্রম, প্রশংসা ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কয়েকটি চমক প্রেক্ষাগৃহের জন্য পরিচালক সরিয়ে রেখেছেন সযত্নে। ৪২ বছর পরে বড়পর্দায় ‘গুরু’র প্রত্যাবর্তন সত্যিই ‘অতি উত্তম’। তাই আরো একবার পর্দায় উত্তমকুমারকে ফিরে দেখতে, নিশ্চিন্তে সপরিবারে দেখে ফেলাই যায় ‘অতি উত্তম’।

Author

  • Debasmita Biswas

    বেথুন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। পড়ার নেশা ছোট থেকে, প্রাথমিকভাবে লেখালেখির শুরু শখেই। তারপর সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা পড়ার অভ্যাস আর বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখার পর বিশ্লেষণ করার শখ থেকেই ইচ্ছে সমালোচক হওয়ার। বিনোদনজগতের বিভিন্ন খবর করার পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা দেখে তার গঠনমূলক সমালোচনাও করেন তিনি।

    View all posts
Scroll to Top