ইন্টারন্যাশনাল কলকাতা শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (IKSFF) এই বছর চার বছরে পা দিল। এই চার বছরেই কলেবরে অনেকটা বড় হয়েছে এই উৎসব। তাই এ বছর তাদের ট্যাগ লাইন “ছোট ছবির বড় উৎসব”। ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি এই ছয়দিন ধরে চলল এবারের ইন্টারন্যাশনাল কলকাতা শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।
প্রায় ৩০টি দেশের ছোট ছবি দেখানো হয়েছে এবারের উৎসবে। সারা পৃথিবী থেকে মোট ২৭০টা ছবি জমা পড়েছিল। আমেরিকা, পোল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, বাংলাদেশ, মিশর,চেক রিপাবলিক, নেপাল, ভুটান, কাতার, সুইজারল্যান্ড সহ প্রায় বিশ্বের সব দেশ থেকেই সেরা সেরা ছোট ছবির মনোনয়ন জমা পড়েছিল। এদের মধ্যে ১২৭ টি ছবি মনোনীত হয়েছে। এই ১২৭ টি ছবিই দেখানো হয়েছে ছয় দিনের উৎসবে। ২৩-২৫ জানুয়ারি অনলাইনে এবং ২৬-২৮ জানুয়ারি রোটারি সদনে বিশ্বের সেরা সেরা ছোট ছবিগুলি দেখানো হয়েছে।
ছবি দেখানো ছাড়াও এবারের উৎসবে ছিল সেমিনার, মাস্টার ক্লাস। ‘সিনেমা উইথ এ কস’ নিয়ে ছিল আলোচনা। হিউম্যান রাইটস, এলজিবিটিকিউ- এর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছিল আলোচনায়।
উৎসবের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, “ছোট ছবিই এখন ভবিষ্যৎ। দিন দিন ছোট ছবির চাহিদা বাড়ছে। এই ফেস্টিভ্যাল নতুন নতুন পরিচালকদের সাহস যোগাবে, উৎসাহ দেবে বলে আমার বিশ্বাস। এবার থেকে মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় ছোট ছবি দেখানো উচিত বলে আমার মনে হয়। একটা ইন্ডাস্ট্রির চৌকাঠ হল এই ছোট ছবি। আমাদের এই ছোট ছবির বাজারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ”।
২৬ তারিখ উৎসবের সূচনায় প্রথমার্ধে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা যথা সৌম্য ব্যানার্জী, দেবলীনা দত্ত প্রমুখ। দ্বিতীয়ার্ধে উপস্থিতি ছিল ক্লিক ( KLIKK) ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘রাজা রানী রোমিও ‘ এর কলাকুশলীরা। উপস্থিতি ছিলেন জয়দীপ ব্যানার্জী, জয়জিৎ ব্যানার্জী, অর্পন ঘোষাল, স্বীকৃতি মজুমদার, জিৎসুন্দর চক্রবর্তী, প্রাঞ্জল দাস ও রানা বসু ঠাকুর প্রমুখ।
২৭ তারিখ উপস্থিত ছিলেন ‘২২শে ন হন্যতে’ শর্ট ফিল্ম এর কলাকুশলীরা। ছিলেন অভিনেত্রী শ্রীতমা দে। ডিরেক্টর প্রশান্ত চ্যাটার্জী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ‘ দুগ্গি’ শর্ট ফিল্ম এর ডিরেক্টর সাগ্নিক চ্যাটার্জী, অভিনেতা দেবরাজ মুখার্জী। এছাড়াও ছিলেন তন্নিষ্ঠা, সায়ন বসু প্রমুখ জনপ্রিয় মুখ।
২৮ জানুয়ারি ছিল উৎসবের শেষ দিন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বসেছিল চাঁদের হাট। অর্ঘ্যকমল মিত্র, পণ্ডিত মল্লার ঘোষ, নবারুণ বোস, দেবরাজ মুখার্জী, মুনমুন সেন, মোহন আগাসে, আলেকজান্ড্রা টেলর, জয়া শীল, রানা বসু ঠাকুর, অপরাজিতা ঘোষ, স্বাতী মুখার্জী, রুমকি চ্যাটার্জী, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ গুণী শিল্পীরা এসেছিলেন। ছিল ঢালাও আয়োজন। প্রায় ৩৫টির বেশি পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। ছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক বৌদ্ধায়ন মুখার্জী সহ ‘২৫১’ শর্ট ফিল্ম এর কলাকুশলীরা। ছিলেন পারমিতা মুন্সী, যুধাজিত বসু প্রমুখ।
এবারে জীবনকৃতি পুরস্কার পেলেন বিশিষ্ট বর্ষীয়ান অভিনেতা মোহন আগাসে। পুরস্কার হাতে নিয়ে তিনি বলেন, “আমার যা বয়স, এই বয়সে আমার যাঁরা বন্ধুবান্ধব আছেন এই অভিনয় জগতে,সবাই এই পুরস্কার পেতে পারেন।কিন্তু এই বছরটা আমার, তাই আমি পাচ্ছি। খুবই ভাল লাগছে।” ছবি কীভাবে দেখতে হবে সেটার ওপর তিনি জোর দেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠান আলো করে ছিলেন মুনমুন সেন। তার ‘ক্যাবেজ’ ছবিটি শেষ দিন দেখানো হয়। মুনমুন বলেন, “ভাল কোনও চরিত্র পেলে অভিনয় করতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু তেমন কেউ ভাল স্ক্রিপ্ট নিয়ে আমার কাছে আসে না।”
প্রতি বছরের মত এবারেও জীবনগুহ মেমোরিয়াল পুরস্কার ছিল ও পুরস্কারটি পান অভিনেত্রী স্বাতী মুখার্জী।
এ বছর সেরা ছোট ছবির জায়গা পেয়েছে ‘গিধ’। সেরা ভারতীয় ছোট ছবি ‘নেহেমিচ’ এবং সেরা বাংলা ছোট ছবির পুরস্কার পেল ‘২৫১’। সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেলেন অস্মিত পাথারে তার ‘টু ওয়ে স্ট্রিট’ ছবির জন্য। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন ‘২৫১’ ছবির জন্য অনির্বান ভট্টাচার্য।বেস্ট এনভায়রনমেন্টাল শর্ট ফিল্ম এ জায়গা করে নিয়েছে ‘ গিভ মি অ্যা লিটল ল্যান্ড ‘। বেস্ট এলজিবিটিকিউ শর্ট ফিল্ম এর পুরস্কার পেয়েছে ‘উডেন টয়লেট’। বেস্ট হিউম্যান রাইটস শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ‘ফাঁসি লাইভ ‘। বেস্ট ট্রাইবাল শর্ট ফিল্ম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ‘পাপায়া’। বেস্ট পিএসএ শর্ট ফিল্ম এর পুরস্কার গ্রহণ করতে সুদূর বোস্টন থেকে এসেছিলেন ‘নয়ার টেডি বিয়ার’ এর ডিরেক্টর মাইক নুনে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন বিভাগে ছিল পুরস্কার। ফেস্টিভ্যাল কমিটি চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ – হিসেবে সেরা ছবি নির্বাচিত হয়েছে ফ্রান্সের “ওয়ার এন্ড পিস’। বেস্ট ডিরেক্টর নির্বাচিত হয়েছেন পারমিতা মুন্সি তার শর্ট ফিল্ম ‘দ্য লাস্ট ট্রাম’ এর জন্যে। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন যুগ্মভাবে সব্যসাচী চক্রবর্তী এবং মুনমুন সেন। বেস্ট মিউজিক ভিডিও এর পুরস্কার পেয়েছেন মেঘ ব্যানার্জী তার ‘ ফ্রাস্ট্রেশন এর গান’ এর জন্যে। বেস্ট হিউম্যান রাইটস শর্ট ফিল্ম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ‘দ্য রোড’।
এছাড়াও এবারে ‘ক্লিক ওটিটি চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ – এ বেস্ট বেঙ্গলী শর্ট ফিল্ম হিসেবে বিজয়ী হয়েছে ‘ এক কেরানি ও পৃথিবী ‘, বেস্ট অ্যাক্টর ইন বেঙ্গলী শর্ট ফিল্ম হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন ‘দেবাশীষ রায়’। বেস্ট ডিরেক্টর ইন বেঙ্গলী শর্ট ফিল্ম হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন প্রশান্ত চ্যাটার্জী ( ২২ শে ন হণ্যতে)। এছাড়াও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য অ্যাওয়ার্ড ‘ বেস্ট বেঙ্গলী অ্যাক্টর অফ দ্য ডিকেড’ পান দীপক চক্রবর্তী ওরফে সবার প্রিয় চিরঞ্জিত।
উৎসবের ডিরেক্টর শাশ্বতী গুহ চক্রবর্তীর কথায়, ” মাত্র চার বছরে আমরা অনেকটাই করেছি, এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে। সবার থেকে দারুন সাড়া পাচ্ছি, এই ভালবাসা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।”
অনেক ধন্যবাদ যারা এই উৎসবকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে আমাদের পাশে ছিলেন। আমাদের সমস্ত স্পনসরস, পার্টনারস, জুরি টিম, অ্যাডভাইজারস, প্রতিযোগী, অতিথি ও আমাদের সহযোদ্ধাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।