ট্রেলার দেখেই বোঝা গিয়েছিল, বাস্তবের মতই নৃশংসতা এবং নিষ্ঠুরতার মিশেলে তৈরী হবে ছবিটি। সেই ধারণা যে আদৌ ভুল নয়, তা প্রমাণ করল এই ছবি।
গত ৯ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছে ‘Dreams On Sale’ এবং ‘Pramod Films’ প্রযোজিত তথাগত মুখার্জীর নতুন ছবি ‘Pariah: Vol 1 (Every Street Dog Has A Name)’। নিজেদের স্বার্থ অথবা ‘স্যাডিস্টিক’ মনোভাব চরিতার্থ করতে পথকুকুরদের উপর (কিছুক্ষেত্রে পোষ্যের উপরও) কিছু মানুষ যে নৃশংস আচরণ করে চলে, তাকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। ‘শান্তির হোটেল’ চালানো গরীব বৃদ্ধা (তপতী মুন্সী) হোন, বা সম্ভ্রান্তবংশীয় কমলিনী (অঙ্গনা রায়), পশুদের সামান্য ভালবাসতে গেলেও বাধার সম্মুখীন হতে হয় সকলকেই। কখনো প্রোমোটার, কখনো প্রতিবেশী, কখনো বা শুভাকাঙ্ক্ষীরূপী শত্রুরা দাঁড়িয়ে থাকে প্রতিপক্ষের জায়গায়। ছবিটি বারংবার ফিরিয়ে আনছিল ‘ভাগাড়কাণ্ডের’ স্মৃতি। প্রতিটি ‘সিস্টেম’-এর ভঙ্গুর দশা, অভ্যন্তরের দুর্নীতির উপর থেকে একঝটকায় পর্দা সরিয়ে দিয়েছে এই ছবি। প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরোনোর পরেও কানে বাজে মাংসবিক্রেতা নন্দর (সৌম্য মুখার্জী) সংলাপ, যারা বাঁচতে পারে না, তারা মাংস হয়ে যায়!
এই প্রথমবার ‘অ্যাকশন ফিল্মে’ দেখা গেল বিক্রম চ্যাটার্জীকে। নিজেকে ভেঙেগড়ে তিনি যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তাঁর প্রত্যেকটি অভিব্যক্তি, প্রতিটি অ্যাকশন সিকোয়েন্স নজর কেড়েছে। মুগ্ধ করেছে সৌম্য মুখার্জীর অভিনয়ও। ‘প্রেম টেম’-এর সেই ক্যাবলা ছেলেটিই যে এই ছবির অনুভূতিহীন কসাই, সংলাপ বলার ধরন, শারীরিক ভঙ্গিমা দেখে তা বিশ্বাস করাও একটু কঠিন। শ্রীলেখা মিত্র এবং অম্বরীশ ভট্টাচার্যকেও এ ছবিতে অন্যরকমভাবে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। অঙ্গনা রায়, লোকনাথ দে (প্রোমোটার), দেবাশীষ রায় (লাট্টু), তপতী মুন্সী, শাহির রাজসহ সকলেরই সাবলীল অভিনয় ভালো লেগেছে। ভাল লেগেছে আবহ এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের কাজ।
কিন্তু এত ভালো অভিনয় এবং কাহিনীতেও সম্পূর্ণ দর্শককুলের হৃদয় জয় করতে পারলেন কি তথাগত? বাস্তবের ঘটনা অবলম্বনে তৈরী করতে গিয়ে কিছু জায়গায় তৈরী হয়েছে অস্বস্তিকর নৃশংসতা। কিন্তু আজকের হিন্দি ছবির সঙ্গে বাংলা ছবির বাণিজ্যিক দিক ভেবে দেখলে হয়ত এই দৃশ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।
অতটা আঘাত এবং রক্তক্ষরণ সত্ত্বেও কীভাবে বিক্রমের চরিত্রটি অতক্ষণ লড়াই করল শত্রুদের সঙ্গে, তা সত্যিই বোঝা যায়নি। ছবিটিকে যথাসম্ভব বাস্তবের কাছাকাছি বানানোর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও, কেবল দর্শকদের মনোগ্রাহী করার উদ্দেশ্যেই অতিরিক্ত ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ অ্যাকশন-দৃশ্যের অবতারণা, মনে উঁকি দিয়েছে এমন সম্ভাবনাও।
তা সত্ত্বেও, ছবিটি দেখার সময়ে চোখ সরানো যায়নি পর্দা থেকে। ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে যে ‘পারিয়া’রা, তারা যেন বাড়িয়ে দিয়েছে স্ক্রিনের আকর্ষণ। ছবির দৈর্ঘ্য অনেকটাই বেশী হওয়া সত্ত্বেও এ গল্পের বুনোট নিয়ে কোনো সন্দেহের জায়গা রাখেননি পরিচালক।
তবে শেষে মনে হয়, এই ছবিতে যে যে উপাদান পরিচালক তুলে রাখলেন সিক্যোয়েলের জন্য, তাতে দ্বিতীয় পর্বে ‘পারিয়া’দের প্রত্যাবর্তন দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় বসে থাকবেন দর্শক।