Live Entertainment & Love Lifestyle

Wednesday, April 2, 2025
Entertainment

“অযোগ্য”: সমুদ্রের গভীরে এক সিলিন্ডার অক্সিজেন খুঁজে পেয়েছেন?

কৌশিক গাঙ্গুলির নতুন সিনেমা “অযোগ্য” প্রথম পোস্টার মুক্তি পেলো আজ শহরের একটি জনপ্রিয় ক্যাফেতে।সিনেমার প্রধান দুই চরিত্র প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণা সামনে আসতেই ফিরে এলো অনেক সাদা কালো ঝাপসা ও সাথে রঙ খেলার আনন্দের হাতছানি।নতুন সিনেমা আর সাথে সেই জুটি এবং পরিচালককে নিয়ে আজকের এই বিশেষ নিবেদন।

 কিছুদিন আগে দশম অবতার দেখতে গিয়ে কিছু তরুণ যুবক-যুবতীদের একটা আলোচনা কানে এলো,আমরা বাংলা সিনেমা কেন দেখি?কেউ হেসে বললো বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াতে হবে,আরেকজন বললো হিন্দিতে এখন যেই সিনেমা চলছে সেখানে গল্প অনেকটা অন্যভাবে দেখায় আজকের বাংলা সিনেমা।তার মধ্যে একজন বলে দিলো,আমি বাংলা সিনেমা এই কারণেই দেখি,কারণ এখনো যারা বাংলা সিনেমার সাথে যুক্ত তাদের দেখেই আমাদের ছোটবেলা কেটেছে।কাদের ছোটবেলা?যারা রবিবার ভাত ঘুম সেরে বিকেল ৪টের সিনেমা দূরদর্শনে দেখতে বসতো।আর তাদের সিনেমার দেখার মাঝখানে চলে আসতো ৫টার বাংলা বুলেটিন।হ্যাঁ, সেই দর্শকদের বাড়ির সন্তানরা আজ বাংলা সিনেমার মাঝারি বয়েসের দর্শক।

কিন্তু হঠাৎ এই কথাটা কেন এখানে বলা হচ্ছে? আদতে বিগত কয়েক বছরে নতুন প্রজন্মর কাছে বাংলা সিনেমার অর্থ অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন বেশ কিছু নতুন সিনেমা নির্মাতারা।দর্শকরা সেই সিনেমা দেখেই বলে,উফ জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ওটিটি প্লাটফর্মে কি ধরণের কাজ আমরা দেখছি আর সেখানে আমরা কি সিনেমা বানাচ্ছি! হতে পারে অনেক সময় এমন অনেক সিনেমা আজকাল তৈরী হয়,যার ভিত স্যাটেলাইট নির্ভরশীল।গল্প “অযোগ্য” হলেও শুধুমাত্র সিনেমার মূল চরিত্রদের জনপ্রিয়তার নিরিখে বিচার করা হয় সিনেমার মেরিট।কারণ চ্যানেল বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতেই সিনেমাকে বিচার করে।তবে বাংলা সিনেমাকে উত্তম-সুচিত্রা পরবর্তী যুগে যারা সব থেকে বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল,সেই প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি দিনের পর দিন মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির বাজারকে ধরে রেখেছিল।এবং বাংলা সিনেমার ইতিহাস লেখা হলে সেই সব কন্টেন্ট তৎকালীন অনেক সমালোচকদের কাছে ভালো সিনেমার মাপকাঠিতে “অযোগ্য” বলেও বিবেচিত হতো। তবুও তারা কিন্তু থেমে যায়নি।একটা সিস্টেম সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সেই সব সিনেমাই ছিল ঘাম-রক্ত দিয়ে এক সাম্রাজ্যের এক-একটা ইট।

আজ ৫ বছর পর সেই জুটির নতুন সিনেমার ঘোষণা হল,পরিচালক জানালেন সিনেমার শুটিং প্রায় শেষ। ছবির নাম “অযোগ্য”
পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলির এই ঘোষণা অনুষ্ঠানের সময়,আজ মিডিয়া যখন উপচে পড়ছে,প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটিকে একসাথে ফ্রেমবন্দি করার জন্য,তখন কোথাও গিয়ে মিলেই গেল যে বাঙালি দর্শকদের কাছে এই জুটির প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা।

আরো পড়ুন: বাঙালি জাতি দেব-অভিজিৎ জুটিকে বিশ্বাস করে! “প্রধান” সিনেমা ট্রেলারে সাহস যুগিয়েছে গোটা টলিউডকে 

বেশ কয়েক বছর তারা একসাথে কাজ না করলেও,নিজেরা নিজেদের মতো ইন্ডাস্ট্রিকে ঠিক ধরে রেখে গেছেন। প্রাক্তন সিনেমার মাধ্যমে তাদের কামব্যাক বাংলা সিনেমার আবালবৃদ্ধবনিতা দর্শকদের এক মুহূর্তে চাগিয়ে দিয়েছিল।তার ফল বক্সঅফিসের ছবির সাফল্যে দেখলেও বোঝা যাবে। আর কৌশিক গাঙ্গুলির দৃষ্টিকোণ সিনেমাতে তাদের আরেকবার ফিরিয়ে আনার জন্য সুরিন্দর ফিল্মস বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। আজ সেই প্রযোজনা সংস্থা,সেই একই পরিচালক একটা নতুন গল্প নিয়ে এই জুটিকে ৫ বছর পর আবার প্রত্যাবর্তন করাতে সক্ষম হয়েছে।বলা বাহুল্য এই ৫টি বছরে আরো একটি প্রজন্ম তৈরী হয়েছে যারা ইদানিং কালে হিন্দি সিনেমার পাশাপাশি বাংলা সিনেমাও দেখা শুরু করেছে।

এবার প্রশ্ন হল,তাদের কাছেও কি এই জুটি প্রাসঙ্গিক?কৌশিক গাঙ্গুলির ছবির মধ্যে সবসময়ই বাঙালি দর্শকরা একটা আলাদাই অজানা ফুলের গন্ধ পেয়ে অভ্যস্ত।যারা প্রতিবার তার সিনেমা দেখে আসার পর অনন্য উপলব্ধির সন্ধান পায়। আর প্রতিবার নতুন দর্শকদের কাছে নিজের একটা সাক্ষর রেখে আসেন,যেটা তাদের পরের সিনেমা দেখার ইচ্ছাকে ত্বরান্বিত করে। ঠিক যেমনটা প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির সিনেমা মুক্তি পেলেই বাঙালিও মিনার বিজলি ছবিঘরের টিকিট লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের আবেগ প্রকাশ করতো। দর্শকদের ভাবনা কিন্তু আজও একই আছে,ছবির গুণগত মানের ভিত্তিতেই তারা আজও ফুল মার্কস দিতে পিছুপা হয় না। সেটা না হলে আজ থেকে এক যুগ আগে কৌশিক গাঙ্গুলিদের মতন পরিচালকদের আত্মপ্রকাশ ঘটতো না। তাই বাংলা সিনেমাকে এখনও যারা পাতে দেওয়ার “অযোগ্য” ভেবে সমালোচনা করছেন,তাদের কাছে এই সিনেমা নিজের কোন জায়গায় স্থান করে নিতে পারে,সেটাই এখন দেখার। আর হ্যাঁ,

এটা প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির ৫০তম সিনেমা!

বাংলা সিনেমার জন্য এটা শুধুই পরিসংখ্যান নাকি সমুদ্রের গহ্বরে এক সিলিন্ডার অক্সিজেন,সেটা না হয় বাংলা দর্শকদের কাছেই ছেড়ে দেওয়া হোক!

Author